E-Paper

বীজতলা কি বাঁচবে, চোখ আকাশে

চলতি মরসুমেও বৃষ্টির ঘাটতি যথারীতি চিন্তা বাড়াচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, জুনে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫২.৯ মিলিমিটার।

বৃষ্টির দেখা নেই। জমি দেওয়া বীজতলা বেড়েছে। বান্দোয়ানের একটি জমিতে।

বৃষ্টির দেখা নেই। জমি দেওয়া বীজতলা বেড়েছে। বান্দোয়ানের একটি জমিতে। ছবি- রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৯:৫৯
Share
Save

বৃষ্টির দেখা নেই। জলের অভাবে মার খাচ্ছে কৃষকদের বীজতলা তৈরির কাজ। এ বারও কি চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না, জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতিতে সেই আশঙ্কাই মাথাচাড়া দিচ্ছে।

সময়ে বৃষ্টির অভাবে গত খরিফ মরসুমে পুরুলিয়ায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর। সেখানে চাষ করা গিয়েছিল ২ লক্ষ ১ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ শতাংশই পূরণ হয়েছিল। যার জেরে মার খেয়েছিল উৎপাদনও। লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক চাষ হলে যেখানে কম-বেশি ১০ লক্ষ টন ধান উৎপন্ন হত, সেখানে তা হয়েছিল কম-বেশি ৬ লক্ষ টন।

চলতি মরসুমেও বৃষ্টির ঘাটতি যথারীতি চিন্তা বাড়াচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, জুনে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫২.৯ মিলিমিটার। সেই হিসেবে চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত যেখানে ১৬৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫৯.৮৪ মিলিমিটার। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা আদিত্যপ্রসাদ দুয়ারি জানান, এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ৬৪.৫ শতাংশ।

মূলত একফসলি জমিপ্রধান পুরুলিয়ায় চাষ বলতে খরিফ মরসুমের আমন চাষ। জেলার সিংহভাগ চাষিই রোহিন পরবে ‘বীজ পুণ্যাহ’ পালন করেন। অর্থাৎ, এ দিনে জমিতে বীজ বপনের সূচনা হয়। তার পরে ধাপে ধাপে বীজ বপন চলে। চাষিরা জানান, জমিতে বীজ বপন করা হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হলে ‘কল’ (চারা) বেরোবে কী করে, বাড়ছে চিন্তা। বীজ বপনের পরে এই সময়টা বীজতলা তৈরির সময়। তবে এ বারও গত মরসুমের মতো বৃষ্টি কমে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষিরা। কাশীপুর ব্লকের ভুঁইয়াডি গ্রামের চাষি জলধর মুর্মুর কথায়, “গত বারে বীজ বপনের পরে কয়েকটা বৃষ্টি পেয়েছিলাম। চারাও বেরোল। তার পরে আর বৃষ্টি পেলাম না। আফরের (চারা) বয়স বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টির অভাবে বেশ খানিকটা জমিতে আর রোয়ার কাজ করতে পারিনি। মূলত বাইদ জমিতে কোনও ধানই হয়নি।” তাঁর আক্ষেপ, এ বারও তো একই অবস্থা। বীজ তো ফেলেছি। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে বীজতলাই তৈরি করা যায়নি। চাষের অবস্থা দেখে ছেলেপুলেরাও চাষে উৎসাহ হারাচ্ছে। এত দিন চাষ করলেও এ বারে বলছে, ভিন্ রাজ্যে কাজে যাবে। বান্দোয়ানের ঢোলবাইদ গ্রামের চাষি চুনারাম মুর্মুও বলেন, “গত বছরও বৃষ্টির অভাবে চাষ হয়নি। চারা মরে গিয়েছিল। এ বারেও বীজ বুনেছি। কিন্তু বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি না হলে অদৃষ্টে কী লেখা আছে, কে জানে!”

জেলা কৃষি উপ অধিকর্তা বলেন, “গত মরসুমে প্রথম দিকে বৃষ্টির ঘাটতি থাকলেও পরের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় মোট বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। তবে শুরুর দিকের বৃষ্টির ঘাটতি থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বারে এখনও সময় আছে। চাষিরা বীজতলা তৈরির কাজ করছেন। বীজ থেকে ‘কল’ বেরোলে ২১ দিনের মধ্যে চারা রোয়ার কথা বলা হয়। আমরা আশাবাদী, বৃষ্টি হবে।”

বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তায় বাঁকুড়ার চাষিরাও। গত দু’বছর বর্ষার ঘাটতিতে জেলায় খরিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বারও নির্দিষ্ট সময়ে বর্ষা না ঢোকায় দুশ্চিন্তা দানা বেঁধেছে চাষি মহলে। জেলায় গত কয়েক দিনে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে বীজতলা তৈরি করতে পেরেছেন চাষিরা। তবে সেই বীজতলা বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, মে মাসে জেলায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছিল। তবে চলতি জুন মাসে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জুনে জেলায় সামগ্রিক ভাবে ২২৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কেবল ৫৭.১ মিলিমিটার বৃষ্টিই হয়েছে। ছাতনার চাষি পঞ্চানন কুন্ডু, বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়ার চাষি মন্টু মাজিরা বলেন, “বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে মাঠে কাদা হয়েছিল। তাই বীজতলা গড়া গিয়েছে। কিন্তু নিয়মিত বৃষ্টি না হলে মুশকিলে পড়ব। বর্ষা পুরোপুরি না আসা পর্যন্ত চিন্তা কাটবে না।” বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বরূপা সেনগুপ্ত বলেন, “বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে বীজতলা গড়ার কাজ চাষিরা শুরু করেছেন। পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।