আলুর জমি থেকে জল বের করছেন ময়ূরেশ্বরের চাষি।
কেউ জমিতে আলু লাগিয়ে ফেলেছেন। কেউ বা আলু লাগানোর জন্য জমি তৈরি করে রেখেছেন। নিম্নচাপের অকাল বৃষ্টি তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আলু চাষ কিছুটা হলেও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে, লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন ওই সব চাষি। পাশাপাশি, এই বৃষ্টির কারণে গম, সর্ষে চাষেও দেরি হবে বলে জেলার চাষিরা জানিয়েছেন।
কৃষি দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , গত বছর ২১,১৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ২০,০০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল হেক্টর প্রতি ৩০০ কুইন্টাল। গত বছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আলু চাষ হয়ে গিয়েছিল। এ বারে ২০,৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৮,৭৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বৃষ্টির জন্য বাকি জমিতে চাষ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কায় রয়েছে কৃষি দফতরের।
সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আলুচাষের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু মাঠে ধান থাকায় অনেক চাষি ওই সময়ের মধ্যে আলু চাষ করতে পারেননি। জমি তৈরি করেছিলেন। বৃষ্টি নেমে যাওয়ায় তাঁরা এখন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। যাঁরা আলু চাষ করেছেন তাঁরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। ময়ূরেশ্বরের নবগ্রামের কেশব ভান্ডারি বিঘে প্রতি ১০/১১ হাজার টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছেন। ওই গ্রামেরই সাগর সরকার দু’বিঘে জমিতে চাষ করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘এ ভাবে বৃষ্টি হলে আলু পচে যাবে। না হলে ধসা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা হলে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’’
লাভপুরের লাঘাটার সুখেন মণ্ডল, সাঁইথিয়ার মোনাইয়ের সুবোধ দাস, রামপুরহাটের বসুইপাড়ার নবকুমার মণ্ডল, নলহাটির পানিটা গ্রামের সাধন মণ্ডলেরা আলুচাষের জন্য জমি তৈরি করে রেখেছিলেন। বিঘে প্রতি খরচ পড়েছিল ২,৫০০-৩,০০০ হাজার টাকা। কিন্তু বৃষ্টির জন্য তাঁদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। অনেক আলু চাষি ১,২০০ টাকা দরে এক বস্তা (৫০ কেজি) আলুর বীজ কিনে তা লাগিয়েছেন। পরে চাপান সার ও পোকার উপদ্রব কমানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগের সময়ে বৃষ্টি এসেছে। ফলে, জমিতে লাগানো আলুর বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন আছে, তেমনই মাটির তলার পোকা আলুর বীজ খেয়ে ফেলার আশঙ্কাও আছে। আলু চাষিরা জানান, এই পরিস্থিতির জন্য আলু চাষ করতে আরও ১০/১২ দিন সময় লেগে যাবে। সে ক্ষেত্রে ফের জমি তৈরি করতে হতে পারে। তাতে খরচ বেড়ে যাবে।
কৃষি দফতরেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে , নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাষ হলে ফ্রেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথমেই আলু উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই আবহাওয়ার জন্য আলু উঠতে অনেক দেরি হয়ে যাবে বলে চাষিদের আশঙ্কা। সাঁইথিয়ার বনগ্রামের সাধন মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের নারায়ণঘাটির জীবন দাসেরা বলেন, ‘‘সময় মতো আলু তুলতে পারলে চাহিদা থাকায় দাম পাওয়া যায়। শেষের দিকে দাম পড়তে থাকে। তাই এর পরে আর আলু চাষ করব কি না ভাবছি।’’
জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শিবনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘অকাল বৃষ্টির জন্য আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ঘাটতি হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি না দেখে উৎপাদন মার খাবে কি না তা এখনই বলা যাবে না।’’
অন্য দিকে, গম ও সর্ষে চাষিরাও জানিয়েছেন চাষ শুরু হতে দেরি হবে। চাষিরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির ফলে মাটি রসালো থাকবে। এর ফলে রোদ উঠে জমি না শুকনো পর্যন্ত গম, সর্ষে চাষ করা যাবে না বলে চাষিরা জানিয়েছেন। কৃষি আধিকারিকেরাও জানিয়েছেন, বৃষ্টির জন্য গম, সর্ষে চাষে কিছুটা হলেও দেরি হচ্ছে। তবে নিম্নচাপের বৃষ্টির জন্য গম, সর্ষের ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও কৃষি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।
তথ্য সহায়তা: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy