জলের অভাব বীজতলায়। বাঁকুড়ার গৌরাঙ্গডিতে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
শ্রাবণেও বৃষ্টি যেন কৃপণ। পুকুর-খালের জলও তলানিতে। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সেচের জলের কতখানি সংস্থান হবে, তা নিয়েও সংশয় পুরোমাত্রায়। এই পরিস্থিতিতে আমন ধানের বীজতলা বাঁচানো যেমন সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে, তেমনই ১৫ অগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কত শতাংশ জমিতে ধান চারা রোপণ করা যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে বাঁকুড়ায়।
নিজের বিঘা বারো জমিতে ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন ছতনার খড়বনার চাষি পঞ্চানন কুণ্ডু। সেচের সুযোগ না থাকায় অনাবৃষ্টিতে বীজতলা শুকোচ্ছে। পঞ্চাননের আক্ষেপ, “সব চারা মরে গিয়েছে। ভাল বৃষ্টি নামলেও চাষ করতে পারব না।” হিড়বাঁধের প্রদীপ্ত মহান্তির বিঘা দশেক জমির পাশে একটি পুকুর থাকলেও তা প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। প্রদীপ্ত জানান, পুকুরে জমা বৃষ্টির জলেই চাষ করি। সে আশায় বীজতলা করেছিলাম। বীজতলা কোনও ভাবে বেঁচে আছে। কিন্তু মাঠে কাদা না হওয়ায় রোওয়ার কাজ করতে পারছি না।’’
সোনামুখীর নবাসন পঞ্চায়েতের তেলরুই গ্রামের চাষি নিতাই গড়াই তাঁর সাত বিঘা জমিতে ১২০ টাকা প্রতি ঘণ্টায় সাবমার্সিবল পাম্প ভাড়া করে জল নিয়ে ধান রোয়ার কাজ করেছেন। কিন্তু তিনিও স্বস্তিতে নেই। নিতাই বলেন, “মাটিতে রস নেই। দ্রুত জল টেনে নিচ্ছে। ধান একটু বড় হলেই ফের সেচের দরকার। আর জল কেনার সামর্থ নেই। ভারী বৃষ্টি না হলে চাষের ভরাডুবি নিশ্চিত।’’
জেলা জুড়ে চাষিদের মধ্যে এ বার আমন চাষ নিয়ে এমনই হতাশা ও আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। গত বছর জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল না। তবে ফসল তোলার সময় অতিবৃষ্টিতে মাঠে পচে নষ্ট হয় বেশ কিছু ধান। এ বার অনাবৃষ্টির জেরে কার্যত ধান রোয়াই যায়নি জেলার বেশির ভাগ এলাকায়। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই খরিফ ধান রোয়ার মরসুম শেষ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা দানা বেঁধেছে জেলা কৃষি দফতরের কর্তাদের মধ্যেও।
বৃষ্টির ঘাটতি জেলায় কতটা?
কৃষি দফতর সূত্রে দাবি, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে মোটামুটি অগস্টের শেষ ভাগ পর্যন্ত চলে ধান রোয়ার কাজ। ওই সময় বৃষ্টি খুবই জরুরি। বৃষ্টির ঘাটতিতে এ বার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে আশাবাদী নন কৃষিকর্তাদের অনেকেই। অনেকেই অনুমান করছেন, বৃষ্টি তেমন না হলে টেনেটুনে দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে (যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম) ধান রোয়া হতে পারে। শেষ মুহূর্তে বড় মাপের বৃষ্টি হলে সেই পরিমাণ দু’লক্ষ হেক্টর ছাপিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিকর্তাদের একাংশ।
বাঁকুড়া জেলার উপকৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর রায় বলেন, “আগামী ক’দিনে জেলায় ভারী বৃষ্টি নামবে বলেই আমরা আশাবাদী। তবে চাষিদের বলছি, বৃষ্টির আশায় না থেকে স্থানীয় পুকুর, সাবমার্সিবল বা গভীর নলকূপ থেকে জল নিয়ে মাঠে কাদা করে ধান রোয়ার কাজ শুরু করতে। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি।” (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy