সুরক্ষা: বৃষ্টি ও কুয়াশা থেকে কপির চারা বাঁচাতে দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। বাঁকুড়া ২ ব্লকের মোবারকপুর গ্রামে শুক্রবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
সকাল থেকে মেঘের আনাগোনা বাঁকুড়ার আকাশে। তবে কি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে বৃষ্টি নামবে এই জেলাতেও—এই প্রশ্নই শুক্রবার ঘুরেফিরে শোনা গেল বিভিন্ন মহলে। দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যদি তার প্রভাবে ফের কালীপুজোর আগের মতো টানা বৃষ্টি নামে বাঁকুড়ায়, তা হলে চাষ বরবাদের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন চাষিরা। আনাজের দাম-বৃদ্ধির ভয়ে তটস্থ গৃহস্থও। ‘বুলবুল’-এর প্রভাব পশ্চিমের এই জেলায় কতটা পড়বে, তা নিশ্চিত নয়। তবে চাষিদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা কৃষি ভবন ও উদ্যানপালন দফতর।
কালীপুজোর আগে, নিম্নচাপের পর থেকেই জেলার বাজারে আনাজের দর আকাশ-ছোঁয়া। দাম ক্রমশ বেড়ে চলেছে আলু ও পেঁয়াজেরও। পুজোর মুখে জেলায় জ্যোতি আলু যেখানে প্রতি কেজিতে ১৪-১৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, কালীপুজোর পরে তার দাম চড়ে গিয়েছিল কেজিতে ১৮ টাকা। শুক্রবার আলুর দর আরও দু’টাকা বেড়ে কেজিতে ২০ টাকা হয়েছে।
পেঁয়াজের দর কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বাঙালির। পুজোর সময় কেজিতে ষাট টাকা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছিল ৫০ টাকায়। কালীপুজোর পরে ফের চড়েছে পেঁয়াজের দাম। এ দিন বাঁকুড়ার বাজারে পেঁয়াজের দর গিয়েছে কেজিতে ৭০ টাকা। বাঁকুড়ার নুনগোলা রোডের বাসিন্দা প্রবীর ঘোষ বলেন, “এখনই আনাজের দাম এত বেশি যে কূলকিনারা পাই না। আরও চড়লে, কী খাব জানি না। দাম নিয়ন্ত্রণে নজর দেওয়া দরকার প্রশাসনের।’’
মূল্যবৃদ্ধির জেরে হেঁশেল চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। বাঁকুড়া জেলায় এ বার বর্ষাতি পেঁয়াজের চাষ বেড়েছিল অনেকটাই। জেলা উদ্যানপালন দফতর জানাচ্ছে, গত বছর জেলায় যেখানে বর্ষাতি পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল প্রায় তিনশো বিঘা জমিতে, এ বার তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ বিঘা। তবে কালীপুজোর আগে নিম্নচাপে ফসলের ক্ষতি হয়েছে কিছুটা।
উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, নভেম্বরের শেষ দিকে জেলার পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা। তখন থেকেই পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তাঁরা আশাবাদী। কিন্তু ‘বুলবুল’ সেই আশায় জল ঢালে কি না তা নিয়ে উদ্বেগে উদ্যানপালন আধিকারিকেরাও।
বৃষ্টি জেলায় দিন তিনেক স্থায়ী হলেই পেঁয়াজ-সহ বিভিন্ন আনাজের ক্ষতির প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক মলয় মাজি। তিনি বলেন, “বুলবুল জেলায় প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত নই। তবে চাষিদের নির্দেশ দিচ্ছি, বৃষ্টি হলে জমিতে যাতে জল না দাঁড়ায় তার জন্য আগাম ব্যবস্থা করতে।”
স্বস্তিতে নেই জেলা কৃষি ভবনও। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “ঘূর্ণিঝড় কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে, এখনই তা বলা মুশকিল। তবে এই মুহূর্তে শিষ আসায় ধানগাছের মাথা ভারী হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি না হয়ে কেবল ঝড় হলেই, গাছ নুইয়ে পড়ে যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই চাষিদের বলা হচ্ছে, অপেক্ষা না করে পাকা ধান কেটে ফেলুন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, আগের নিম্নচাপে জেলায় চাষাবাদের ক্ষতি বিশেষ কিছু হয়নি, উল্টে রবি শস্যের পক্ষে সহায়ক বাতাবরণ তৈরি করেছিল। কিন্তু এখন বৃষ্টি নামলে তা চাষের পক্ষে ভাল হবে না।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “চাষাবাদ প্রকৃতির উপরে নির্ভরশীল করে। ঝড়-বৃষ্টি এলে ঠেকানো যাবে না। তবে প্রশাসন চাষিদের পাশে সব সময়ে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy