তছনছ হয়ে গিয়েছে ক্লাবঘরের নীচতলা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
নিশুত রাতে নিঝুম গোটা এলাকা। হঠাৎই কানফাটানো আওয়াজ! ঘুম ভেঙে বাসিন্দারা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, রাস্তার উপরে তিন তলা ক্লাবের নীচের তলায়
দাউদাউ আগুন জ্বলছে। চারপাশ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে মল্লারপুর বাজার এলাকার ওই বিস্ফোরণ ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। কোনও হতাহতের খবর না থাকলেও বিস্ফোরণের অভিঘাতে যে ভাবে ক্লাবঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, কে বা কারা ঘটাল—কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর মেলেনি। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘দমকল দফতর থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মামলা শুরু করেছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, বলা যাবে না।’’ রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে, ঘটনাটিকে ঘিরে রাজনীতির তরজা শুরু হয়েছে। জেলায় যে দু’টি পঞ্চায়েত বিজেপি-র দখলে রয়েছে, তার একটি মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই বিস্ফোরণের জন্য বিজেপি-কেই দায়ী করেছেন। রবিবার সন্ধ্যায় রামপুরহাটে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘‘মল্লারপুরের ওই ক্লাবটা বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের কাছে পরশু খবর আসে, ওই ক্লাবে ঝাড়খণ্ড থেকে এনে বোমা মজুত করা আছে। মল্লারপুর রেল স্টেশনের পাশেই ক্লাব। তাই মজুত করতে সুবিধা হত।’’ অনুব্রতের আরও দাবি, ‘‘রবিবার পুলিশ সুপারের ‘রেড’ করার কথা ছিল। সে-কথা ওরা জানতে পারে। তার আগেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’’
ঘটনা হল, ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলেরই। তিনি ক্লাবের সদস্যও। অনুব্রতকে সেকথা জানানো হলে তাঁর প্রতি ক্রিয়া, “তাতে কী হয়েছে! তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হলেই কি জেনে যাবে বিজেপি কী করছে?’’
যদিও অনুব্রতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ক্লাবের সদস্যেরা। ক্লাবের সহ-সভাপতি সন্দীপ সিংহ, সদস্য পিন্টু ভকতরা জানালেন, এই ক্লাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকই সদস্য। ক্লাবের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে কোনও চর্চা হত না। তাঁদের দাবি, ক্লাবকে বদনাম করার জন্য এবং এলাকার শান্তি শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাইরে থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। মল্লারপুরের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্ব আবার প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ সুপার কোথাও অভিযানে গেলে, তা গোপন থাকার কথা। সে কথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জানলেন কী করে? বিজেপি-র তরফে বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক এবং মল্লারপুরেরই বাসিন্দা অতনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুব্রত ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। ওই ক্লাবের সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সব দলের কর্মীরাই এই ক্লাবে আসেন। বিস্ফোরণ কী ভাবে তা পুলিশ তদন্ত
করে দেখবে। তৃণমূল রাজনীতি করার জন্যই আমাদের দলের নামে দোষারোপ করছে।’’
রাজনৈতিক চাপানউতোরের বাইরে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত এই ভেবে যে, রাতে না হয়ে বিস্ফোরণ যদি দিনের বেলায় হত, তা হলে কী হত! কারণ, প্রতিদিনই ওই ক্লাবে প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। জিমন্যাসিয়ামের পাশাপাশি নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ওই ক্লাব। স্থানীয় বাসিন্দা মোবারুল শেখ, শৌভিক মণ্ডল বললেন, ‘‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আঁকা ও নাচের ক্লাসে আসে। চলে কোচিং সেন্টার। দিনের বেলায় এই বিস্ফোরণ হলে কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটত, ভাবতেই পারছি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy