Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Bogtui Murder

মুখে আশা, বুকে ভয়ের বাসা

গত বছরের ২১ মার্চ রাতে এই বগটুই গ্রামেরই বাসিন্দা বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখ খুন হওয়ার পরে গ্রামে বেছে বেছে ভাদু বিরোধী ১২টি বাড়িতে ভাদু অনুগামীরা অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ।

One year of the horrifying incident in Bogtui

সেদিন এবং এ দিন। এক বছর আগে ঘটনার পর বগটুই গ্রােম বানিরুল শেখের বাড়ি, পিছনে সোনা শেখের বাড়ি। পুলিশ প্রহরার মধ্যেই জীবনের ছন্দ। ফাইল চিত্র ও নিজস্ব চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৪
Share: Save:

বছর ঘুরতে চলল। আতঙ্ক কি কেটেছে বগটুইয়ে? জীবন কি স্বাভাবিক হয়েছে? ছন্দে ফেরার আশা থাকলেও ভয় যেন এখনও বাসা বেঁধে রয়েছে বগটুইয়ে।

শনিবার দুপুর দু’টো। বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়া। ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বগটুই গ্রামের ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে পার্শ্ববর্তী চন্দনকুণ্ঠা, পাবরোখিয়া হয়ে কামাক্ষ্যা গ্রাম পর্যন্ত পাকা রাস্তা। বগটুই গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেল গ্রামের পূর্বপাড়ার শেষপ্রান্তে মিহিলাল শেখের বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে শহিদ বেদি তৈরি হচ্ছে। গত বছরের ২১ মার্চ ভাদু শেখ খুনের পরে বগটুইয়ে হামলায় নিহতদের স্মৃতিতে বিজেপি আগামী শহিদ দিবস পালন করবে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ওই দিন বগটুই গ্রামে সভা করার কথা। তিন জন মিস্ত্রি ছাড়া কাউকে তদারকি করতে দেখা গেল না। সামনে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন আছেন।

পুলিশ অবশ্য গ্রামে আছে এক বছর ধরেই। সেই ঘটনার পর থেকেই। গ্রামবাসীরাও জানালেন, গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকার প্রয়োজন আছে। পুলিশ থাকার জন্য কিছুটা হলেও মানুষ রাতবিরেতে বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন। দেখাও গেল গ্রামের রাস্তায় টোটো, ম্যাজিক ভ্যানে গ্রামের লোক ও আশপাশের গ্রামের লোক যাতায়াত করছেন। তবুও গ্রামের মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যেই কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত।

গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা জানালেন, ‘‘এমন শান্ত পরিবেশ থেকেই তো হঠাৎ আগুন জ্বলেছিল। তাই ভয় হয়।’’ পূর্বপাড়া ঢোকার মুখে রাস্তার ধারে একটি দোকানের মালিক রৌশেনারা বিবি জানালেন, ‘‘২০২২-এর ২১ মার্চের ঘটনার আগে রাত্রি নটা সাড়ে নটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতাম। বিকিকিনিও ভালো ছিল। তারপর থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাতের দিকেও একটা আতঙ্কের মধ্যে ঘুমোতে হয়।’’ আর এক বাসিন্দা লায়লা বিবি জানালেন, ‘‘তখন অনেকেই ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা দিনমজুর পরিবারের মানুষ। স্বামী ভ্যানচালক। স্বামীর রোজগারে সংসার চলে। তাই আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে পারিনি। তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ক্ষতি হয়েছে।’’

গত বছরের ২১ মার্চ রাতে এই বগটুই গ্রামেরই বাসিন্দা বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখ খুন হওয়ার পরে গ্রামে বেছে বেছে ভাদু বিরোধী ১২টি বাড়িতে ভাদু অনুগামীরা অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে গ্রামের বাসিন্দা সোনা শেখের বাড়ি থেকে সাতটি আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পরে গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসেন। গ্রামে সিবিআই আধিকারিকদের দাপাদাপি, ধরপাকড় চলাকালীন গ্রামের স্বজনহারা পরিবার-সহ অনেকেই গ্রাম ছাড়া ছিল।

শনিবার বগটুই গ্রামে সেই একই বাড়ির অবস্থা।

শনিবার বগটুই গ্রামে সেই একই বাড়ির অবস্থা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

এখন স্বজনহারা পরিবার-সহ অনেকেই গ্রামে ফিরলেও ভাদু শেখের পুরনো বাড়ি, ভাদু শেখের তিন দাদার বাড়ি এখনও ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেল। জানা গেল, ভাদুর তিন দাদা এবং ভাইপো-সহ ভাদুর সৎ ভাই ওই ঘটনায় জেল হেফাজতে আছে। ভাদুর দাদাদের পরিবারের সদস্যরা কেউ ভাদু শেখের বগটুই মোড়ে নতুন বাড়িতে, কেউ আবার অন্য জায়গায় বাস করছে। ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবি বলেন, ‘‘আমি কিছু বলতে চাই না। আমি আমার নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। এর বেশি কিছু চাই না।’’ বগটুইয়ে হামলা ও খুনে মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে অপমৃত্যু হয়েছে। লালনের স্ত্রী রেশমা বিবি ছেলেমেয়েকে নিয়ে লালনের পুরনো বাড়িতে বসবাস করছেন। রেশমাও এ দিন কোনও কথাই বলতে চাননি।

আশার কথা, জীবনের ছন্দে ফেরার কথাও অবশ্য শোনা গিয়েছে। গ্রামে দেখা মিলল মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানা থেকে সাইকেলে ফেরি করতে আসা এক ফেরিওয়ালার সঙ্গে। জীবন মণ্ডল নামে ওই ফেরিওয়ালা জানালেন, ‘‘রামপুরহাট শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। ছ’মাস ধরে বগটুই-সহ আশপাশ গ্রামে ফেরি করে বেড়াচ্ছি। রাস্তায় কোনও অসুবিধে হয় না।’’ বগটুই গ্রামে ১৯ বছর ধরে দুধ বিক্রি করতে আসেন পাশের কামাক্ষা গ্রামের বীরবল মণ্ডল নামে এক দুধ ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, ‘‘গত বছরের ঘটনার কয়েকদিন রাস্তাঘাটে পুলিশ জিজ্ঞাসা করত। এখন আর কোনও অসুবিধে হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bogtui Murder Rampurhat Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE