আনাজের খেতের উপর দিয়ে গিয়েছে হাতির দল। নিজস্ব চিত্র
রবিবার থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের জয়পুর রেঞ্জে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে দলমা থেকে আসা হাতির দল। দিনে তাদের ঠিকানা বাসুদেবপুর বিট অফিসের পিছনের কোশির জঙ্গল। না হলে সামনের গুড়ামির জঙ্গল। রাতে বেরোচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। ফসল তছনছ করে কিছু খাচ্ছে। আর পিছনে চরকিপাক ঘুরে হদ্দ হচ্ছেন বনকর্মীরা।
মঙ্গলবার রাতেও তা-ই হল। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়ার মতো করে হাতির দলটি গেল কোশির জঙ্গল থেকে গুড়ামির জঙ্গলে। কিন্তু সোজা পথে নয়। বুধবার সাকালে বন বিভাগের বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত ডিভিশনের তথ্য বলছে, সারা রাতে গোটা পঞ্চান্ন হাতি মিলে লন্ডভন্ড করেছে বিঘের পরে বিঘে ঝিঙে, কুমড়ো, লাউ আর সদ্য রোয়া ধান।
ওই রাতে বনকর্মী আর ‘এলিফ্যান্ট স্কোয়াড’-এর লোকজনকে স্বস্তি দিয়ে দলটি প্রথমে ফেরার পথ ধরেছিল। কিন্তু কোশিরবাগান থেকে লোটিহিড় গ্রামের দিকে রওনা দেয়। বাসুদেবপুর, মড়ারের ক্যানালপাড় লাগোয়া জমি, চুয়াশোল, বাগডোবা গ্রাম ঘুরে গুড়ামির জঙ্গলে গিয়ে ওঠে।
বুধবার ভোরে বাসুদেবপুরে ঝিঙে জমির পাশে ব্যাগ নিয়ে চুপ করে বসেছিলেন মুস্তাফা মণ্ডল আর অর্জুন লোহার। গত চৈত্রে ১৮ কাঠা জমিতে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে ঝিঙে চাষ করেছিলেন। ঠিক ছিল, বুধবার বিষ্ণুপুর বাজারে নিয়ে যাবেন। সকালে খেতের পাশে এসে দেখেন, হাতি সব মাড়িয়ে চলে গিয়েছে।
আদিবাসী গ্রাম বাগডোবার হরিচাঁদ সোরেন, বাদল হেমব্রম, বুড়া সোরেনরা বলছিলেন, ‘‘দিনে ২৪০ টাকা মজুরিতে বন দফতরের হয়ে হাতির হাত থেকে অন্য গ্রামের ফসল বাঁচাতে গিয়েছিলাম। ভোরে নিজের গ্রামে এসে দেখি, আমাদের জমিই ঘেঁটে দিয়েছে।’’ তাঁদের আক্ষেপ, হাতি সামলানোর মজুরি হাতে আসবে মাস কাবার করে। কিন্তু রাতারাতি হাজার তিনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। কল্পনা সোরেন বলছিলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে সারা রাত ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম।’’
বাগডোবার টেলা সোরেন, হরিচাঁদ সোরেনদের আক্ষেপ, ‘‘দিনমজুরি করে পেট চলে। বর্ষার ভরসায় এক বার ধান করি। ঘরে খাওয়ার জন্য। সেটাও গেল।’’ ওই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দু’বছর হাতির পাল আসেনি। নিশ্চিন্তে চাষ শুরু করেছিলেন। বৃষ্টি ঠিক মতো হচ্ছে না। ঘণ্টা পিছু দাম দিয়ে সেচের জল কিনেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বন দফতরের এক ডিভিশনের সঙ্গে আর এক ডিভিশনের বোঝাপড়ার অভাবে এই পরিস্থিতি হচ্ছে।’’
ডিএফও (বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেৎ) নীলরতন পাণ্ডা বলেন, ‘‘দলটিতে বাচ্চা হাতি বেশি রয়েছে। মনে হয়, সেই জন্যই ভরা দ্বারকেশ্বর পেরোতে চাইছে না।’’
তিনি জানান, হাতির দলটি মেদিনীপুরের দিকেই এগোবে বলে মনে করা হচ্ছে। বন দফতর তাদের তাড়া করছে না। বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়িয়ে নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দাদেরও বলা হচ্ছে সতর্ক থাকতে। ফসলের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবেদন করলে চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানিয়েছেন ডিএফও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy