Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মানুষ-হাতির সংঘাত উঠে এল মণ্ডপে

যে ভাবে দলমা পাহাড় ছেড়ে আসা হাতির দল গ্রামে ঢুকে লোকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তা ঠিক নয়। তেমনই ঠিক নয়, খাবারের টানে আসা ওই বন্যপ্রাণীদের উপর জ্বলন্ত মশাল কিংবা হুলা ছুড়ে মারাও।

জীবনের ছবিই থিম বিষ্ণুপুরে বিশ্বকর্মা পুজোর মণ্ডপে।—নিজস্ব চিত্র

জীবনের ছবিই থিম বিষ্ণুপুরে বিশ্বকর্মা পুজোর মণ্ডপে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

যে ভাবে দলমা পাহাড় ছেড়ে আসা হাতির দল গ্রামে ঢুকে লোকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তা ঠিক নয়। তেমনই ঠিক নয়, খাবারের টানে আসা ওই বন্যপ্রাণীদের উপর জ্বলন্ত মশাল কিংবা হুলা ছুড়ে মারাও। প্রায় দু’দশক ধরে হাতি সমস্যায় নাজেহাল এলাকার গাড়ি চালকেরা এ বার সেই সচেতনতার বার্তা সামনে রেখেই বিশ্বকর্মা পুজো করছেন। বিষ্ণুপুর ছোটগাড়ি মালিক ও চালক সমিতির বিশ্বকর্মার পুজো মণ্ডপের এটাই থিম।

বিষ্ণুপুর শহরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কৃত্রিম জঙ্গল ও লাগোয়া গ্রাম বানিয়ে হাতি ও মানুষের এই সংঘাতের ছবি তুলে ধরা হয়েছে মাটির শিল্পকর্মের মাধ্যমে। লোকালয়ের গাঁ ঘেঁষে যেমন হাতিদের চলাফেরা রয়েছে, তেমনই উন্মত্ত হাতির পায়ে পিষ্ট মানুষের দেহ পড়ে থাকারও মডেল রয়েছে। আবার তাদের দিকে হুলা নিয়ে তেড়ে যাওয়া মানুষের মডেলও রয়েছে। পাশে লেখা বেশ কয়েকটি পোস্টার।

দুর্গাপুজোর মণ্ডপে থিমের ছড়াছড়ি দেখতে অভ্যস্ত এই শহর। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোতেও থিমের প্রচলন সে ভাবে ছিল না। তাই শনিবার সকাল থেকেই এমন একটি থিমের মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন শিশু থেকে বুড়োরা। শহরের বাসিন্দারা তো বটেই, বাসস্ট্যান্ডে নানা কাজে আসা লোকজনকে ভিড় করতে দেখা গিয়েছে এখানে।

বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর জন্য বাসস্ট্যান্ডে ফল কিনতে এসেছিলেন জয়পুরের বাসিন্দা বিনয় পাল। প্রচুর লোক দেখে কৌতূহল বশে মণ্ডপের সামনে গিয়ে তিনি তাজ্জব। তিনি বলেন, ‘‘এতো আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনা। গত কয়েক বছর ধরে হাতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে আমাদের!’’

বস্তুত বিষ্ণুপুর মহকুমাতেই এখন বিভিন্ন গ্রামে দলমার কয়েক দল হাতি বিচরণ করছে। শুক্রবার বড়জোড়ার বেলেশোল গ্রামে এক ব্যক্তিকে একটি হাতি আছড়ে মেরেছে। হাতির হানায় মানুষের মৃত্যু, জখম হওয়া যেমন আছে, তেমনই ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতিও কম নয়। অন্যদিকে, ফসল বাঁচাতে মাঠে গ্রামবাসীর পাতা বৈদ্যুতিক তারেও গত ক’বছরে কয়েকটি হাতি মারা যায়। সন্দেহ কয়েকটি আবার কীটনাশকের প্রভাবেও মারা গিয়েছে। তার উপরে ট্রেনের ধাক্কাতেও হাতি মৃত্যু এই জেলায় নতুন নয়। সম্প্রতি পিয়ারডোবা ও বিষ্ণুপুরের মাঝে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায় একটি শাবক-সহ তিনটি হাতির মৃত্যু হয়।

শহরের অনেকে আবার এখনও হাতির সামনা-সামনি পড়েননি। তাঁরাও মণ্ডপে ভিড় করেছিলেন। হাতির বিশাল শরীর আর লম্বা দাঁত, শুঁড় দেখে বাবার কোলে থাকা বছর চারেকের এক শিশু আবার প্রশ্ন করে বসে— ‘‘বাবা হাতি কামড়ে দেয় নাকি?’’

মণ্ডপের ভিতরে তৈরি জঙ্গলে পুজো পাচ্ছেন যন্ত্রের দেবতা বিশ্বকর্মা। তাঁর আশপাশে বেশ কয়েকটি হাতি। হাতিদের দিকে তাকিয়ে দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করতে দেখা গেল বিষ্ণুপুরের তেজপাল এলাকার এক মহিলাকে। কী ব্যাপার? তাঁর জবাব, ‘‘গত বছর হাতি ঠাকুরের একদম সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। একজন মারা গেলেও খুব রক্ষা পেয়ে গিয়েছি। হাতি ঠাকুরের পুজো হচ্ছে জেনে তাই দেখতে এলাম।’’

এমন ভাবনাটা মাথায় এলো কী করে? পুজো কমিটির সম্পাদক অমিতাভ মাঝি বলেন, ‘‘আমাদের ছোটগাড়ির চালকেরা প্রায়ই জয়পুর জঙ্গলে হাতির সামনে পড়ে যান। তখন বিশ্বকর্মা ও তাঁর বাহনের শরণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ঠাকুরের ইচ্ছায় কোনও বড় অঘটন ঘটেনি। তাই হাতিদের নিয়ে সচেনতনা তৈরি করার বার্তা দেওয়ার ভাবনা থেকেই এই থিমের কথা মাথায় এসেছে।’’

ছোটগাড়ির চালক গৌতম দে, দেবীপ্রসাদ লোহার, প্রশান্ত জানা, রবীন্দ্রনাথ ধবলদের বক্তব্য, ‘‘বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাস্তায় জয়পুরের জঙ্গলে কতবার যে হাতির সামনে পড়েছি। ভেবেছি এই বোধহয় গাড়ি উল্টে দিল। কিন্তু প্রতিবারই হাতিঠাকুর দেখা দিয়েও কোনও অনিষ্ট করেনি। তাই আমরা এ বার সংগঠনে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এলাকায় হাতি-মানুষের এই জ্বলন্ত সমস্যার কথায় মণ্ডপে তুলে ধরব। খুব সাড়া পাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant attack Vishwakarma Puja theme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy