মগ্ন: চলছে রেডিও সারাইয়ের কাজ। কীর্ণাহারে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
বছরভর দেওয়ালের তাক, আলমারির উপরে ধুলো মেখে পড়ে থাকে তা। কদর বাড়ে মহালয়ার আগে। ধুলো ঝেড়ে টিউনিং করাতে কেউ যান মিস্ত্রির কাছে। কেউ বদলান ব্যাটারি। টেলিভিশনের রমরমাতেও মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে সেই রেডিও ছাড়া তো নেই অন্য কিছুই।
মহালয়ার ভোরে রেডিওর সেই সুর শুনতে বছরভর বিশেষত অপেক্ষায় থাকেন প্রবীণেরা। তাতে ফিরে আসে ছোটবেলার স্মৃতি। অনেকেই বলেন, ‘‘তখন সব বাড়িতে টেলিভিশন তো দূরের কথা, ছিল না রেডিও-ই। বসতির কোনও এক বাড়িতে ভোরে গিয়ে একসঙ্গে সবাই মিলে শোনা হতো সেই হৃদয়-ছোঁয়া মন্ত্রোচ্চারণ, কালজয়ী একের পর এক গান।’’
সে সব দিনের কথা স্পষ্ট মনে পড়ে নানুরের আনাইপুরের মায়া সাহা, লাভপুরের কল্যাণী মণ্ডলের। ষাটোর্ধ দুই মহিলা বলেন, ‘‘তখন পাড়ায় ২-৩টি বাড়িতে রেডিও ছিল। মহালয়ার ভোরে পাড়ার লোকেরা ওই সব বাড়িতেই মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে ভিড় জমাতেন। ভোরে উঠতে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখা হতো। অনুষ্ঠান শেষে চা খেয়ে পড়শিরা যে যার বাড়ি ফিরে যেতেন।’’
টেলিভিশনের দাপটে পুরনো সেই ছবি অনেকটা ফ্যাকাসে হলেও কোথাও কোথাও এখনও রেডিও-ই মহিষাসুরমর্দিনী শোনার মূল মাধ্যম হয়ে রয়েছে। নানুরের মাধপুরের মিনতি চট্টোপাধ্যায়, পদ্মাবতী নন্দী বলেন, ‘‘রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনীর সুর না শুনলে পুজো পুজো বলে মনেই হয় না। এখনও মেঝে মুছে কম্বল পেতে ধুপধুনো জ্বালিয়ে রেডিওতে মহালয়া শুনি।’’
নানুরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী রবীন্দ্রনাথ দাস, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সারা বছর রেডিওর খোঁজ না করলেও মহালয়ার আগে ব্যাটারি বদলে মিস্ত্রির কাছে রেডিও টিউনিং করিয়ে আনি।’’
এই সময় রেডিও মেরামতের দোকানেও জমে ভিড়। কীর্ণাহারের রাধাকান্ত সিংহ, নানুরের বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হরেক বিনোদনের দাপটে রেডিও শোনার চল নেই বললেই চলে। সারা বছর কার্যত কোনও কাজ থাকে না। মহালয়ার আগে রেডিও মেরামত ও বিক্রি বাড়ে। আমরাও তা-ই সারা বছর এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy