লোকপাড়া সর্বজনীনের পুজোয় প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
দোলার এক দিক যদি থাকে শাসক পরিবারের ছেলের কাঁধে, তা হলে অবধারিত ভাবে অন্য দিকে, থাকে বিরোধী পরিবারের ছেলের কাঁধ। বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে রাজনৈতিক সম্প্রীতির দোলায় চড়ে মা আসেন ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপে। শুধু কচিকাঁচারাই নয়, বড়রাও রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে পুজোর ক’টা দিন এক সঙ্গে মেতে ওঠেন। রাজনৈতিক বিভেদের পাশাপাশি, জাতপাত, উঁচু-নিচুর ব্যবধানের বেড়া ভেঙে দিয়েছে এই পুজো। এমনই দাবি এলাকাবাসীর।
এই পুজো কমিটির সভাপতি রয়েছেন আরএসএস-এর সংগঠক হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক অনিলকুমার দে। আর সম্পাদক রয়েছেন তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল কমিটির সভাপতি চন্দ্রনীল ঘোষ। কমিটিতে সিপিএম কর্মী ধনপতি দলুই, গৌতম মুদিদের পাশাপাশি, রয়েছেন তৃণমূল কর্মী রাজকুমার মণ্ডল, মানব মণ্ডল, বিমান মণ্ডলেরাও। নিছক কাগজে-কলমে পদ অলঙ্কৃত করে থাকাই নয়, চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে প্রতিমা নিরঞ্জন—সবেতেই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যায় তাঁদের। চন্দ্রনীলবাবুরা বলেন, ‘‘পুজোটাকে আমরা সর্বজনীন উৎসব বলেই মনে করি। তাই সমস্ত রাজনৈতিক ছুৎমার্গ দূরে সরিয়ে রেখে পূজোর ক’টা দিন একাত্ম হয়ে যাই।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে ওই এলাকায় কোনও সর্বজনীন পুজো ছিল না। দু’টি বনেদী বাড়ির পুজো থাকলেও, সেখানে সবাই সমানাধিকার পেতেন না। তাই এলাকার বাসিন্দাদের মনে আক্ষেপ ছিল। সেই আক্ষেপ দূর করতেই ১৬ বছর আগে স্থানীয় লোকপাড়া, ডাঙাপাড়া, ঢেকা-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা সম্মিলিত ভাবে ওই পুজোর প্রচলন করেন। সেই পুজোটিই এখন আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। সোনালি মণ্ডল, মিনতি মণ্ডল, সন্ধ্যা বাগদি, শঙ্করী দলুইরা বলেন, ‘‘অঞ্জলি দেওয়া থেকে সিঁদুর খেলা— সবেতেই আমরা সমান ভাবে যোগদি। কোনও ছুৎমার্গ মাথায় আসে না।’’
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ছুৎমার্গ থাকে না। দোলা আনার জন্য এ বারে তৃণমূল সমর্থক পরিবারের তন্ময় বাগদির পাশাপাশি নির্বাচন করা হয়েছে সিপিএম সমর্থক পরিবারের তুহিন বাগদিকে। তারা দু’জনেই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারা বলে, ‘‘খবরটা শোনার পরে উত্তেজনায় দিন গুনছি। বনেদী বাড়ির পুজোয় দোলা আনার সুযোগ তো আমাদের ছিল না। এখানে পেলাম।’’
পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা ফটিকচন্দ্র দে, নিতাই কোনাই, প্লাবন মণ্ডল, বিষ্ণুব্রত ঘোষেরা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিবাদ যাই থাক না কেন, পুজোর ক’দিন আমরা সব ভুলে একাত্ম হয়ে যাই। মনে হয় সবাই যেন একটি পরিবারের লোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy