Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Labpur

অনটনে পুজো বন্ধ, ৩০ বছর কাঠামো রক্ষা 

অথচ দিন এমন ছিল না। সরকার পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, পরিবারের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ময়ূরেশ্বরের ঢেকা মহালের গোমস্তা।

সেই কাঠামো। লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র

সেই কাঠামো। লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ 
লাভপুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুজো। সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়েছে মাটির মণ্ডপ। রয়ে গিয়েছে কাঠামো। ফের পুজো প্রচলনের আশায় ৩০ বছর ধরে সযত্নে সেই কাঠামো রক্ষা করে চলেছে লাভপুরের লাঘোষা গ্রামের সরকার পরিবার। পুজো এলেই রীতিমতো ‘নস্ট্যালজিক’ হয়ে পড়েন ওই পরিবারের সদস্যেরা।

অথচ দিন এমন ছিল না। সরকার পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, পরিবারের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ময়ূরেশ্বরের ঢেকা মহালের গোমস্তা। ওই পরিবারের সদস্য, প্রয়াত রামচন্দ্র সরকার জমিদারের কাছে দুর্গাপুজো প্রচলনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে জমিদার পুজো চালানোর জন্য প্রতি বছর সংগৃহীত খাজনার একটা অংশ তাঁকে বরাদ্দ করেন। সেই টাকায় আনুমানিক ৩৬০ বছর আগে সরকার বাড়িতে পুজোর প্রচলন হয়। নির্মিত হয় মাটির মণ্ডপ। সেই সময় পুজোর রমরমাই ছিল আলাদা। বোধনের দিনে ছাগ বলি দিয়ে পুজো শুরু হয়ে যেত। বিশাল শোভাযাত্রা-সহ লাগোয়া ময়ূরাক্ষী নদী থেকে দোলা আনা হত। পুজোর চার দিনই গ্রামের মানুষজনকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। হরেক রকম বাজনা এবং আতসবাজি সহকারে বিসজর্নের শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামত।সে-সব আজ ইতিহাস।

জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছে খাজনা আদায়ের কাজ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুজো চালানোর জন্য জমিদারের বরাদ্দ আর্থিক সাহায্য। পুজোর আড়ম্বর কমতে কমতে এক সময় পূর্বপুরুষের প্রচলিত পুজো উত্তরপুরুষের কাছে কার্যত মাতৃদায় হয়ে দাঁড়ায়। বছর তিরিশ আগে নমো নমো করে সেই দায় উদ্ধার করেছেন প্রয়াত কামাক্ষ্যাপদ সরকার। তার পর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় সরকার বাড়ির পুজো।

পুজো বন্ধ হলেও থেকে যায় মণ্ডপ-সহ কাঠামো। সংস্কারের অভাবে সে মণ্ডপও ভেঙে পড়েছে। কিন্তু, কাঠামো এবং বলির হাঁড়িকাঠটি আজও রয়ে গিয়েছে। সুদিন ফিরবে, ফের চালু হবে পুজো—এই আশায় আজও সযত্নে তা রক্ষা করে চলেছেন সরকারবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। ইলারানী সরকার বলেন, ‘‘পুজো এলেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। শ্বশুর-শাশুড়ির মুখে শুনেছি, এক সময় পুজো দেখতে আমাদের বাড়িতে মানুষের ঢল নামত। এখন অঞ্জলি দিতে আমাদেরই অন্যের বাড়িতে যেতে হয়! প্রতি বছরই মাকে বলি, সুদিন ফিরিয়ে দাও। আবার তোমার পুজো চালু করব।’’

পরিবারের সদস্য অলোককান্তি সরকার জানান, যৎসামান্য জমি চাষ করে কোনও রকমে দিন চলে। পুজো চালু করার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাঁদের নেই। তাঁর কথায়, ‘‘তা বলে মায়ের কাঠামো ফেলে দিতে পারি না। তাই নিত্য ফুল জল দিয়ে রেখে রক্ষা করে চলেছি । মা কোনও দিন মুখ তুলে চাইলে ওই কাঠামোতেই ফের মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy