পানীয় জল প্রকল্পের কাজ চলছে নিতুড়িয়ার রায়বাঁধে। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ (রাজ্যের ‘জলস্বপ্ন’) প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১৬ শতাংশ বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া গিয়েছে। জেলার পুরো অংশে পানীয় জল দেওয়ার কাজ এখনও ঢের বাকি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ শেষ হলেই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ করার শর্ত চাপানোর পরিকল্পনা নেওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন অনেকে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, উন্নয়নের প্রয়োজনীয় অর্থ ঠিক ভাবে খরচ করতে কিছু বাছাই করা প্রকল্পে অর্থ মঞ্জুরির পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে বদলানো হবে। কাজের অগ্রগতির বদলে কাজ শেষে ফল মেলার ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হবে। এতে পুরুলিয়ার মতো জলাভাবের জেলায় বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার এই কাজ থমকে যাবে না, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পুরুলিয়ার নির্বাহী বাস্তুকার সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, কয়েকটি পর্বে তাঁরা এই কাজ করছেন। গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় জল সরবরাহের জন্য পুরুলিয়া জেলায় গড়ে ওঠা ৫২টি প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে ১৭টি ঠিকঠাক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাকি ৩৫টি প্রকল্পের সংস্কারের প্রয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে এই প্রকল্পগুলির সংস্কার করা হবে। তৃতীয় পর্বে যে সব এলাকায় নলবাহিত জল সরবরাহের পরিকাঠামো নেই, সেখানে কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।
দফতর সূত্রে খবর, ওই এলাকায় দুই ভাগে কাজ হবে। উত্তরে পাঞ্চেত জলাধার, দক্ষিণ-পূর্বে মুকুটমণিপুর জলাধারকে এই অংশের জলের উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে। পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১,০৯৫টি মৌজা এবং মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জেলার ৫২৭টি মৌজায় পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রথম দু’টি পর্বের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা এবং তৃতীয় পর্বের জন্য ২,৬০০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানান, গোটা প্রকল্প কয়েকটি ভাগে করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী অর্থ মিলছে। এখনও পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ‘মানভূম পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাক্টর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে কাজের টাকা পাওয়া নিয়ে ঠিকাদারদের কোনও সমস্যা নেই।’’
তবে এই প্রকল্পে কেন্দ্র কাজ শেষের পরেই টাকা বরাদ্দ করার কৌশল নিলে কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দফতরের আধিকারিকেরা মন্তব্য করতে চাননি। তবে এই কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পের কাজকে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি পুরুলিয়ায় দলীয় সভায় রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্র-রাজ্য যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, সেগুলি আগে রাজ্যকে শেষ করতে হবে। তারপরে কেন্দ্র তাদের অংশ রাজ্যকে দেবে। এক দিকে প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে দাও, অন্যদিকে আদায় করা কর বাবদ প্রাপ্য টাকা আটকে রাখো— এ ভাবে কী করে রাজ্য কাজ করবে?’’ তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পেরে না উঠে এ ভাবে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করতে চাইছে বিজেপি।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জায়গা থেকে এ ভাবেই কি বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পে বরাদ্দ আটকে রাখা হবে? পানীয় জল প্রকল্পের টাকা আটকে গেলে এই বিশাল কাজ হবে কী ভাবে?’’
অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার দাবি, ‘‘কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে তৃণমূল প্রচারে নেমেছে। কিন্তু টাকা দিলে তো হিসেব দিতে হবে। একটি প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে খরচ দেখিয়ে দেওয়া তো হিসেব দেওয়া নয়।’’ তিনি জানান, পুরুলিয়ায় জল প্রকল্পের কাজে কোনও সমস্যা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy