— ফাইল চিত্র।
কেমন আছেন গ্রামের মানুষ— তা জানতে আদিবাসী গ্রামে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গেলেন বীরভূমের জেলাশাসক।
গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, রেশন ব্যবস্থা কেমন, সকলের কার্ড রয়েছে কিনা, ১০০ দিনের কাজ পান কিনা, পানীয় জলের জোগান কেমন, এলাকার অন্য সমস্যা কী, গ্রামবাসীদের জীবিকা কী— এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেতে মঙ্গলবার বিকেলে সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত কামারডাঙায় পৌঁছন মৌমিতা গোদারা বসু। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তাঁর সঙ্গে ছিলেন এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, জেলা খাদ্য নিয়ামক তরুণকুমার মণ্ডল, সিউড়ি ১ ব্লকের বিডিও শিবাশিস সরকার সহ একাধিক সরকারি আধিকারিক। জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিককে নাগালে পেয়ে সুবিধা-অসুবিধার কথা মন খুলে জানাতে পেরে খুশি শতাধিক পরিবারের ওই আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা।
ওই পঞ্চায়েতে এলাকায় রয়েছে পাথরচাপুড়ি। মঙ্গলবার পাথরচাপুড়ি উন্নয়ন পর্যদের অধীনে দাতাবাবার মাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ছিল। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে গাড়ি ঘুরিয়ে কামারডাঙা আদিবাসীপাড়ায় হাজির হন জেলাশাসক। অনুষ্ঠান শেষে সিউড়ি ফেরার পথে ওই গ্রামে জেলাশাসক যেতে পারেন, এমন একটা ইঙ্গিত মঙ্গলবার সকালেই পেয়েছিল ব্লক প্রশাসন। ইঙ্গিত পৌঁছেছিল গ্রাম পঞ্চায়েতেও। জানা গিয়েছে, প্রায় ৭০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দুই পাড়ার গ্রামের ঠিক মাঝখানে এসে থামে জেলাশাসকের গাড়ি। সেখানে দাঁড়িয়েই গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন ডিএম।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গৌতম রায় ও গ্রামের বাসিন্দা তথা উপপ্রধান সোনামণি মুর্মূও ছিলেন সেখানে। কোথায় কোথায় অসুবিধা, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া তথ্য সঙ্গে থাকা ব্লক প্রশাসন আধিকারিক ও পঞ্চায়েতকে দেখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জেলাশাসক প্রথমেই জানতে চান, ‘‘আপনাদের গ্রামের সব চেয়ে বড় সমস্যা কোনটি?’’ সমবেত উত্তর আসে— ‘‘জলের সমস্যা।’’ গ্রামবাসীরা জানান, গরমে তাঁদের গ্রামে পুকুর শুকিয়ে যায়। দৈন্যন্দিন কাজ থেকে কৃষিকাজের জন্য সেচের জল পেতে সমস্যা হয়। জেলাশাসক সেখানে একটি সাবমার্সিবল পাম্প করার নির্দেশ দেন। চেক ড্যাম করে জল সমস্যা মেটানো যায় কিনা, তা-ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে খতিয়ে দেখে জানাতে বলেন।
এর পরে ডিএম জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘রেশন ঠিক মতো পাচ্ছেন কি?’’ গ্রামের কিছু মানুষ রেশন কার্ড না থাকার কথা তুলে ধরেন। আবাস যোজনায় বাড়ি, কন্যাশ্রী-রূপশ্রী প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ নেন ডিএম। অনেকে জানান, এমন প্রকল্পের কথা তাঁদের জানা নেই। গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য ছাগল ও হাঁস দেওয়া হয়েছে কিনা তা জনাতে চান ডিএম। বিডিও তাঁকে জানান, ছাগল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে চলতি অর্থবর্ষে এখনও ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প শুরু করা যায়নি শুনে ক্ষুব্ধ হন জেলাশাসক। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা তাঁকে জানিয়েছেন, দ্রুত ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাসমণি মুর্মূ এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘বিয়ে হয়ে গ্রামে এসেছি। কিন্তু রেশন কার্ড হয়নি। এমন বেশ কয়েক জনের ক্ষেত্রেই ঘটেছে।’’ দুলু মুর্মূ নামে এক বাসিন্দা জন্ম শংসাপত্র পেতে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। জেলা খাদ্য নিয়ামক জেলাশাসককে জানান, গ্রামে অধিকাংশ বাসিন্দারই রেশন কার্ড রয়েছে। ভুল রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ হয়েছে। কিছু সংশোধিত রেশন কার্ড বিলি করা হচ্ছে। যাঁরা বিয়ে হয়ে এই গ্রামে এসেছেন, কার্ড তৈরি হচ্ছে তাঁদেরও।
গ্রামের বেশ কিছু মহিলার সঙ্গে কথা বলেন ডিএম। উঠে আসে এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রসঙ্গও। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এই এলাকায় কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার কথা বারবার শোনা গিয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তা ঘটে। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেন ডিএম। কী ভাবে মহিলাদের সঠিক জীবিকার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেন সঙ্গে থাকা আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের সঙ্গে। উপপ্রধান সোনামণিদেবীকে ডিএম পরামর্শ দেন, ‘‘গ্রামের মহিলারা যাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেন তা দেখুন।’’
পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বাসিন্দারা রেশন পাচ্ছেন। আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন। অদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ পেনশনও পাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে গ্রামের বাসিন্দারা ১০০ দিনের কাজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি। তা করলে ওই প্রকল্পে গ্রামে পুকুর বা জলাশয় খননের উপায় রয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজও দেখলাম না। বিডিও শীঘ্রই ওই সব বিষয়ে বৈঠক ডাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy