সাবিত্রী মুর্মু (বাঁ দিকে) ও বিটি মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
মীরাবাই চানু, পি ভি সিন্ধুদের নাম শুনেছে ওরা। অলিম্পিকে যাওয়া মেয়েদের লড়াই দেখে তারাও চায় খেলাধুলোর মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে। কিন্তু আর্থিক সমস্যা এবং করোনার কোপে প্রায় দেড় বছর ধরে চর্চা বন্ধ জেলার দুই ভলিবল খেলোয়াড় ছাত্রীর। জেলার ক্রীড়া মহলের অনেকেই বলছেন, কেবল ওরা দু’জন নয়, জেলায় এ রকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
আর্থিক সমস্যার মধ্যেও রাজ্য স্তরে জেলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিল দ্বাদশ শ্রেণির ওই দুই আদিবাসী ছাত্রী। তাদের একজন, রামপুরহাট থানা এলাকার সেনবাদরা গ্রামের বাসিন্দা সাবিত্রী মুর্মু। বাড়ির সদস্য বলতে মা ও দিদি। ছোট থেকেই বাড়িতে আর্থিক অনটন। মা ও দিদি দিনমজুরের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালায়। বাড়িতে থাকলে সাবিত্রীকেও সেই কাজ করতে হয়। তার কথায়, ‘‘অভাবের মধ্যেও সব সমস্যা কাটিয়ে তিন বার রাজ্য স্তরে জেলার হয়ে খেলেছি। কিন্তু এখন খেলা পুরোপুরি বন্ধ।’’ আগামী দিনে আদৌও ভলিবল হাতে সাবিত্রীকে মাঠে দেখা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয়ী সাবিত্রী নিজে এবং তাঁর প্রশিক্ষক মৃণাল মাল দু’জনেই।
একই অবস্থা আরেক খেলোয়াড় বিটি মুর্মুর। মহম্মদবাজার থানা এলাকার জেঠিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিটির বাড়িতে মা, বাবা, দাদা রয়েছে। অন্যের জমিতে চাষবাসের কাজ করে সংসার চলে। সেও তিন বার রাজ্যস্তরে জেলার হয়ে ভলিবল খেলেছে। আর্থিক সঙ্কট এবং সুযোগের অভাবে দেড় বছর ধরে খেলাধুলো বন্ধ করে বাড়ির কাজে হাত লাগিয়েছে বিটিও।
সাবিত্রী ও বিটি দু’জনেই জানায়, অভাবের জন্য খেলার পোশাক, জুতো কেনার টাকা পরিজনেরা দিতে পারেন না। সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গার্লস স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করতে করতেই তারা নিজেদের উদ্যোগে খেলা চালিয়ে গিয়েছে। জেলার হয়ে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও তাঁদের খেলার কোচ মৃণাল মাল কিনে দিয়েছেন। তাই তাঁরা খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
মাধ্যমিকের পর তারা নলহাটি গার্লস স্কুলে ভর্তি হয়। যেহেতু নলহাটিতে সেন্ট্রাল ট্রাইবাল হস্টেলে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং ওই স্কুলে খেলাধুলোর ব্যবস্থা রয়েছে তাই তারা সেখানে ভর্তি হয়। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। তাই এখন তারা বাড়িতে। নিয়মিত খেলার চর্চাও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বরং বাড়ির আর্থিক সমস্যা কাটাতে কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। সাবিত্রীর কথায়, ‘‘বাড়িতে থেকে খেলাধুলো করব সেই উপায় তো নেই। প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই। তাছাড়া বাড়িতে কাজ করতে করতে সময় কেটে যায়।’’ একই কথা বলে বিটির আশা, ‘‘স্কুল খুললে হয়তো আবার প্র্যাকটিস করতে পারব।’’
জেলার ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকের অভিমত, খেলাধুলো নিয়ে ছেলেরা যে মাত্রায় সুযোগ পায়, মেয়েরা তা পায় না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যায় না বলে তাঁদের দাবি। প্রশাসন এগিয়ে এলে এই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা যেতে পারে বলে আশা অনেকের। ওই দুই ছাত্রীর কোচ মৃণাল মাল বলেন, ‘‘ওদের মত আমার অনেক ছাত্রী আর্থিক এবং পারিবারিক কারণে খেলা ছেড়ে সংসার করতে শুরু করেছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যদি এগিয়ে আসেন এবং প্রশাসন যদি উদ্যোগী হয় তাহলে এই মেয়েরা খেলায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy