জেলা বইমেলার স্থান-বিতর্কে কার্যত দু’ভাগ শাসক দল তৃণমূল। —ফাইল ছবি
জেলা বইমেলার স্থান-বিতর্কে কার্যত দু’ভাগ শাসক দল তৃণমূল। রঘুনাথপুরে বইমেলা করার দাবি তুলেছেন ওই এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের একাংশ আবার চান, বইমেলা হোক জেলা সদর পুরুলিয়ায়।
প্রত্যেক জেলায় মহকুমাগুলিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জেলা বইমেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য গ্রন্থাগার দফতর। সে মোতাবেক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪-৯ জানুয়ারি জেলা বইমেলা হবে রঘুনাথপুরে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, এটিএম ময়দানে হবে বইমেলা। এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ৮ ডিসেম্বর বইমেলার আয়োজক ‘লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি’র (এলএলএ) সভা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই রঘুনাথপুরের বদলে পুরুলিয়ায় বইমেলা করার প্রস্তাব দেন। এলএলএ’র সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরুলিয়া শহরে বইমেলা করার প্রস্তাব বিবেচনার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
রঘুনাথপুরের তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কোনও অজুহাতেই বইমেলার স্থান বদল করা চলবে না। বুধবার এই দাবিতে রঘুনাথপুর শহরে পথসভা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর শহরের তৃণমূলের সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতা। একই বক্তব্য পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর প্রণব দেওঘরিয়া এবং দলের যুব-মহিলা শাখার নেতা-নেত্রীদেরও। বিষ্ণুর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রঘুনাথপুরে বইমেলা হবে। কিন্তু এখান থেকে বইমেলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তার বিরোধিতা করছেন। আমাদের বক্তব্য়, কোনও অজুহাতেই বইমেলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যাবে না।”
প্রণবের যুক্তি, রঘুনাথপুরে প্রচুর মানুষ কবিতা লেখেন এবং সাহিত্যচর্চা করেন। অনেক বই প্রকাশকও রয়েছেন সেখানে। রঘুনাথপুরে বইমেলা হবে শুনে তাঁদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই সব মানুষজনের সঙ্গে বইমেলার আয়োজন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এখন শোনা যাচ্ছে, বইমেলার স্থান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সর্বস্তরের মানুষ এর বিরোধিতা শুরু করেছেন।” প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁরা নেবেন, জানিয়েছেন ওই পুর-প্রতিনিধি।
বাঁকুড়ায় জেলা বইমেলা সোনামুখী শহরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রথমে। পরে গ্রন্থাগার দফতর জানায়, বইমেলা হবে বাঁকুড়া শহরে। রঘুনাথপুরের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, একই ঘটনা ঘটতে পারে পুরুলিয়াতেও।
বাঁকুড়ার উদাহরণ টেনে সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চাইছে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন মহকুমায় বইমেলা হোক। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি না। তবে বাস্তব চিত্র হল, মহকুমাস্তরে বইমেলা করার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। সে কারণেই রাজ্য সরকারের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছে।” সুজয়ের যুক্তি, ‘‘ঝালদা-বান্দোয়ানের মতো জায়গায় লোকজনের যাতায়াতে সমস্যা হবে। প্রকাশক সংস্থাগুলিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। তা-ই জেলার মধ্যবর্তী কোনও এলাকায় বইমেলা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে মহকুমাগুলিতে বইমেলা করার পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা এখন থেকেই শুরু হবে।”
সুজয়ের যুক্তি মানতে নারাজ রঘুনাথপুরের কবি-সাহিত্যিকদের বড় অংশও। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, অতীতে রঘুনাথপুরে দু’বার বইমেলা হয়েছে। পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হবে, সেই দু’বার বই বেচাকেনার পরিমাণ খুব একটা কম ছিল না।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় বইমেলা হচ্ছে মহকুমায়। যে কোনও জায়গায় বইমেলা করা যেতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy