—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের মধ্যে পুরুলিয়া জেলাতে দরিদ্র মানুষের বাস সব থেকে বেশি। আর তালিকায় তৃতীয় বাঁকুড়া। নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য জানা গেলেও দুই জেলায় বড় কর্মসংস্থানের দিশা কোথায়?
মুখ্যমন্ত্রীর ‘খেলা হবে’ প্রকল্প ঘোষণার পরে এই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন শ্রমিক থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে যুক্ত করে স্থায়ী সম্পদ তৈরির মতো বড় কাজ করা সম্ভব। সেই কাজ থেকেও পরবর্তী সময়ে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। কিন্তু রাজ্যের ভাঁড়ারে যেখানে টান, সেখানে ‘খেলা হবে’ প্রকল্পে তা কি সম্ভব হবে?
পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির পুরুলিয়া জেলার দায়িত্বে থাকা প্রেমচাঁদ মাইতির দাবি, ‘‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পে কত জন জবকার্ডধারীকে রাজ্য কাজ দিতে পেরেছে? পুরুলিয়া জেলার ১০-১২টি ব্লকের খবর জানি। অধিকাংশ পঞ্চায়েতই শ্রমিকদের কাজের আবেদনপত্র জমা নেয়নি। কোনও কোনও পঞ্চায়েত আবেদন গ্রহণ করলেও কাজ দিতে পারেনি। রাজ্য সরকার যদি পৃথক তহবিল গড়ে শ্রমিকদের কাজ দেয়, তবেই তাঁরা উপকৃত হবেন।’’ তবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দাবি, পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পে ৩৪৮৮ জন জবকার্ডধারী গড়ে ৩০ দিন কাজ পেয়েছেন।
পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পাওয়া দেশের আইনের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক-স্বার্থকে না দেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার স্রেফ রাজনীতি করছে।’’ পাল্টা বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রকল্প মানে তো নতুন কোনও ভাতা ঘোষণা করা। তৃণমূলের দুর্নীতির কারণেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পের এই হাল।’’ অভিযোগ উড়িয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্র রাজনৈতিক স্বার্থেই রাজ্যের গরিবদের একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করছে। বরং ওই প্রকল্পের বিকল্প ‘খেলা হবে’ ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক মুখই দেখা গিয়েছে। বিরোধীরা বিশেষত বিজেপি তা সহ্য করতে পারছে না।’’
অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, দুই জেলায় থাকা একাধিক শিল্পাঞ্চল ও পর্যটনকেন্দ্রের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকর্ষণে আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন।
যদিও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দাবি, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে জেলায় বিনিয়োগ বাড়ছে। জেলায় বারোশোর বেশি শিল্প গড়ে উঠেছে বা গড়ে তোলার কাজ চলছে। আগামী দু’-তিন বছরে সরাসরি সাড়ে ছ’হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামোরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘বাম আমলে গড়ে তোলা রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলের এখন কী অবস্থা, মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কথা আর মানুষ বিশ্বাস করেন না।’’
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে ঝাঁপ পড়েছে। বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলেও এক দশকে বড় কোনও শিল্প আসেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, “কেবল অবাস্তব কথাবার্তা বলেই ১২টা বছর পার করে দিল তৃণমূল। খেলা হবে প্রকল্পও তাতেই একটা নতুন সংযোজন ছাড়া কিছু নয়।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলেরও দাবি, এই জেলায় অর্থনৈতিক বিকাশের অনেক উপাদান রয়েছে। কেবল রাজ্য সরকারের সঠিক নীতির অভাবে সেগুলি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’’
তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মানুষকে স্বনির্ভর করতে আগেও নানা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনেও হবে। যে ভাবে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ সারা দেশের নজর কেড়েছে, ‘খেলা হবে’ প্রকল্পও আগামী দিনে দৃষ্টান্ত গড়বে।’’
রাজনৈতিক তরজা সরিয়ে কাজের আশায় শ্রমিকেরা। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy