Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

রিপোর্টে দেরি, চিন্তা সংক্রমণ

করোনা-রোগী চিহ্নিত করতে জেলা থেকে লালারসের নমুনা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল বা কলকাতার নাইসেডে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৩:৫১
Share: Save:

করোনা-পরীক্ষার রিপোর্ট আসছে জেলার বাইরে থেকে। তাতে সময়ও লাগছে। তার জেরেই জেলায় আরও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে মঙ্গলবারই রামপুরহাট মেডিক্যালে করোনা-পরীক্ষা শুরু হওয়ায় দ্রুত রিপোর্ট পেতে আশাবাদী প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, পুরো জেলায় করোনা-পরীক্ষা শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

করোনা-রোগী চিহ্নিত করতে জেলা থেকে লালারসের নমুনা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল বা কলকাতার নাইসেডে। কিন্তু সেই রিপোর্ট পেতে অস্বাভাবিক দেরি পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। সোমবার দুবরাজপুরের সাহাপুর গ্রামে এক বধূর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। হাওড়ার ডোমজুড় থেকে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ১৩ তারিখ বাড়ি ফিরলে, প্রশাসন ওই বধূ-সহ চারজনকে বক্রেশ্বরে সরকারি নিভৃতবাসে পাঠায়। পরদিন, ১৪ তারিখ সকলের লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। ১৫ তারিখ বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দিয়ে সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চারদিন পর, সোমবার, ১৮ তারিখ বধূর রিপোর্ট পজিটিভ এলেওর বাকিদের রিপোর্ট আসেনি মঙ্গলবার ১৯ তারিখ পর্যন্ত। অভিযোগ, ওই পরিবারের সকলেই ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাই রিপোর্ট পেতে দেরির জন্য সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

রাজনগরের ভবানীপুর পঞ্চায়েতের রাওতাড়া গ্রামেও সোমবার এক নাবালকের করোনা ধরা পড়ার রিপোর্ট আসে। পশ্চিম বর্ধমানে একটি ইটভাটার শ্রমিক ওই নাবালক ১৩ তারিখ ফেরার পর তার লালারসের নমুনা নিয়ে বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেও এই ক’দিনে সে অনেকের সংস্পর্শে এসেছে। সোমবার রাতে রিপোর্ট পাওয়ার পরও হাসপাতালে পাঠানোর আগে ওই নাবালককে পাওয়া যায়নি। সে তিন ঘণ্টা লুকিয়ে ছিল। বহু খোঁজাখুঁজির পর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থেকে ১২মে বোলপুর হাসপাতালে ডায়ালিসিস করতে আসা এক যুবকেরও ওই দিনই লালারসের নমুনা কলকাতার নাইসেডে পাঠানো হয়। রিপোর্ট আসে ১৬ তারিখ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রথম দিন ডায়ালিসিস সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই যুবক ফের ১৫ তারিখ আসেন। তখনও রিপোর্ট আসেনি। পরপর দু’দিন একজন করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসায় সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে ডায়ালিসিস ইউনিটই বন্ধ। চিকিৎসকদের মতে, ২৪ ঘণ্টা না হোক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও যদি রিপোর্ট আসত তাহলেও সমস্যা এতটা জটিল হত না।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে নমুনা পাঠানো হত কলকাতার নাইসেডে। কিন্তু দ্রুত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য পরে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয় লাগোয়া মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। তাতেও সমস্যা মেটেনি। বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে শ’তিনেক করে নমুনা পাঠানো হলেও রিপোর্ট মিলছিল না। সমস্যা দিন সাতেক ধরে আরও জটিল আকার নিয়েছে। শয়ে শয়ে রিপোর্ট বকেয়া পড়ে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘সংখ্যাটা সাতশোরও বেশি। এমনও হয়েছে দশদিন আগে সংগৃহীত লালারসের নমুনার রিপোর্টও আসেনি। এরপর ফের কিছু নমুনা নাইসেডে পাঠানো শুরু হয়েছে।’’

সমস্যা জটিল করেছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণও। তাঁদের নমুনা নিয়ে রিপোর্ট আসা পর্যন্ত ঘরবন্দি থাকতে বলা হলেও তাঁরা অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাসিন্দাদের দাবি, এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। সকলকে সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, প্রতিদিনই প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরছেন। এই পরিস্থিতিতে সকলকে নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা কঠিন। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাসিন্দাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তাঁরা যদি বলার পরেও ঘরে না থাকেন তবে পরিস্থিতি মোকাবিলা ক্রমশই কঠিন হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy