Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Khayrasole Explosion

বিস্ফোরণে মৃত বেড়ে ৮, ক্ষতিপূরণের সঙ্গে প্রশ্নও

সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ লোকপুর থানা এলাকার রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম (পিডিসিএল) পরিচালিত গঙ্গারামপুরচক খনিতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে।

এই গড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে।

এই গড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
লোকপুর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৪৯
Share: Save:

খয়রাশোলের খোলামুখ খনিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল আট। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেওয়া হল মঙ্গলবারই। কিন্তু, সব কিছু ছাপিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কেন এবং কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, যা এত জনের প্রাণ কেড়ে নিল। কারও গাফিলতি ছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।

সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ লোকপুর থানা এলাকার রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম (পিডিসিএল) পরিচালিত গঙ্গারামপুরচক খনিতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে। তার জেরেই প্রাণ হারান ট্রাক চালক সহ ৮ জন। তাঁদের অধিকাংশই খনিতে কর্মরত শ্রমিক। মৃতদের সকলের নাম পরিচয় জানা গেলেও, বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া দু’জনের দেহ শনাক্ত করতে ময়নাতদন্তের আগেই দেহাংশের ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে চার জন স্থানীয় বাস্তবপুর, এক জন পলপাই, এক জন দেবগঞ্জ এবং অন্য দু’জন অণ্ডালের কাজোড়া গ্রামের বাসিন্দা।

দেহগুলির ময়না তদন্ত মঙ্গলবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন পিডিসিএলের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিবি সালিম। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ, জেলাশাসক বিধান রায় ও পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ, বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা এবং খয়রাশোল যে বিধানসভা এলাকার অধীন, সেই দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা উপস্থিত ছিলেন।

ময়না তদন্তের পরে, এলাকায় গিয়ে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন পি বি সালিম। শুধু যে দু’জনের দেহ শনাক্ত হতে বাকি, তাঁদের পরিবারেকে ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা দেওয়া হয়নি বলে সূত্রের খবর। শনাক্তকরণের পরেই বাকি অর্থ দিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। অন্য দিকে, পশ্চিম বর্ধমানের দুই মৃত শ্রমিকের পরিবারের হাতেও ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে।

এলাকা সূত্রে খবর, গঙ্গারামপুরচক খোলামুখ খনি থেকে কয়লা তোলার জন্য নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয় নিয়মিত। পিডিসিএল কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব দিয়েছেন একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ডিটোনেটর ও জিলেটিন স্টিক ভরে তার জুড়ে বিস্ফোরণ ঘটনোর জন্য সোমবার বেলা ১০টা নাগাদ বিস্ফোরক ভর্তি একটি ট্রাক খনি এলাকায় আসে। হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটে ট্রাকে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আশপাশে থাকা শ্রমিক, ট্রাক চালক ও কর্মীদের দেহ।

তার পরেই প্রশ্নটা উঠেছে, যাঁরা বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের উপযুক্ত দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সতর্কতা কি ছিল? এলাকার মানুষের বক্তব্য, কোথাও গলদ না-থাকলে এ ভাবে বিস্ফোরণ ঘটত না। খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের একাংশ জানালেন, বিস্ফোরণ বহন থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বেশ কিছু নিয়ম ও সতর্কতা মেনে চলতে হয়। এ ক্ষেত্রে কোথাও ঘটতি হয়েছে বলেই তাঁদের ধারণা। জানা যাচ্ছে, পশ্চিম বর্ধমানের যে দু’জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন পদমর্যদায় ওভারসিয়ার, অন্য জন টেকনিক্যাল বা কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন। কিন্তু, বাকি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শ্রমিক (ব্লাস্টিং হেল্পার)। যাঁদের তেমন কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না বলেই পরিবারগুলির দাবি।

আরও জানা যাচ্ছে, জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর ও ব্যাটারি —এই তিনের সমন্বয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দু’টি পৃথক গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসাই নিয়ম। কিন্তু, ঘটনার দিন একটি গাড়িই ব্যবহৃত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। এলাকার অনেকের দাবি, বিস্ফোরক একটি ট্রাকেই এসেছিল। সেগুলি নামানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটেছে। ওই এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। মোবাইল কি ব্যবহার করা হয়েছিল—সেই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া বাকি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হচ্ছে। প্রকৃত কারণ জানতে ঘটনাস্থল আসার কথা এফএসএলের (ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি)-র বিশষজ্ঞদের। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলা হয়েছে। যেখানে যেখানে দেহংশ পড়ে ছিল, সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষের গতিবিধি এ দিন থেকে নিয়ন্ত্রিত। আগে কেন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অন্য বিষয়গুলি:

khayrasole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE