Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Death

হোমগার্ডের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, পথে ‘খোলা চিঠি’

ঘটনাস্থল: বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুর ব্লকের নেকড়াপচা গ্রামের এই বাড়িতেই থাকতেন স্পেশাল হোমগার্ড সিদ্ধার্থ পাল (ইনসেটে)।

ঘটনাস্থল: বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুর ব্লকের নেকড়াপচা গ্রামের এই বাড়িতেই থাকতেন স্পেশাল হোমগার্ড সিদ্ধার্থ পাল (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারিকুল ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৮:০৫
Share: Save:

মাটির বাড়িতে ঢোকার মুখে পড়ে স্পেশাল হোমগার্ডের রক্তাক্ত দেহ। গ্রামের রাস্তার কয়েক জায়গায় ছড়িয়ে থাকা খবরের কাগজে লাল কালিতে তাঁকে খুনের কথা লেখা। সোমবার ভোরের এই ঘটনায় স্তম্ভিত বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুর ব্লকের বারিকুল থানার নেকড়াপচা গ্রাম।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সিদ্ধার্থ পাল (৪০) নেকড়াপচারই বাসিন্দা। এক সময় তাঁর মাওবাদী যোগ ছিল। ২০১৫ সালে আত্মসমর্পণ করে, স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরিতে নিযুক্ত হন। সোমবার ভোরে নিজের বাড়ির দরজার সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। মৃতের বাড়ির আশপাশের একাধিক জায়গায় খবরের কাগজের উপরে লেখা প্রায় আটটি খোলা চিঠি উদ্ধার হয়েছে। সেখানে সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে চাকরির টোপ দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ওই চিঠিগুলি মাওবাদী নামাঙ্কিত নয় বলেই দাবি করেছে পুলিশ।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “প্রতিহিংসার জেরে এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লালকালিতে লেখা কিছু চিঠি উদ্ধার হয়েছে। তবে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিপথে চালিত করার উদ্দেশ্যেই সেগুলি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।” পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের তরফে বারিকুল থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মাওবাদী সক্রিয়তার সময়ে, ২০১০ সালে, বারিকুলের এই নেকড়াপচা গ্রামেই খুন হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা তথা শ্যামসুন্দরপুর পঞ্চায়েতের তৎকালীন ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার নির্বাচিত সদস্য সমীর পাল। এ দিনের ঘটনার পরে, নতুন করে ওই ঘটনার কথা উঠে আসছে গ্রামবাসীর আলোচনায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম থেকে পুকুরে যাওয়ার পথেই সিদ্ধার্থর বাড়ি পড়ে। এ দিন ভোরে কয়েকজন পুকুরে যাওয়ার পথেই সিদ্ধার্থর বাড়ির সামনের রাস্তায় খবরের কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা চিঠিগুলি দেখেন। সন্দেহ হওয়ায় সিদ্ধার্থর বাড়ির সামনে যেতেই চোখে পড়ে দরজার সামনে তাঁর রক্তাক্ত দেহ। বাড়ির দরজাও খোলা ছিল। এর পরেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে লাল শালু দিয়ে বেঁধে দেয় দরজা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেই সিদ্ধার্থকে খুন করা হয়েছে।

গ্রামবাসীর একাংশের সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধার্থের বাবা মধুসূদন পাল বছর পাঁচেক আগে মারা গিয়েছেন। মা মিতা পাল নানা জায়গায় ঘুরে মানুষজনের সাহায্য সংগ্রহ করেন। বহু দিন তিনি গ্রামে ফেরেননি। সিদ্ধার্থর ভাই অনিমেষ পাল পেশায় গাড়ির চালক। তিনিও বাইরে থাকেন। এ দিন অনিমেষকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। স্থানীয় কিছু বাসিন্দার দাবি, সিদ্ধার্থ দু’টি বিয়ে করেছিলেন। তবে বর্তমানে কোনও স্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ‘‘কারও সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক ছিল না ওই যুবকের। গ্রামের লোকজনও তাঁকে এড়িয়ে চলতেন।’’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, ইদানীং বাইরে থেকে অনেকেই সিদ্ধার্থর বাড়িতে এসে চোটপাট করতেন। চাকরি না দিতে পারায় টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করতেন তাঁরা। মাসখানেক আগে তেমন কিছু লোকজন সিদ্ধার্থকে মারধরও করেন বলে অভিযোগ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছেও এই তথ্য উঠে এসেছে বলে সূত্রের দাবি।

অন্য বিষয়গুলি:

Death bankura Home Guard
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy