অনাদরে: সিউড়ির সোনাতোড় পাড়ার দামোদর মন্দির। নিজস্ব চিত্র
সিউড়ি শহরের শতাব্দী প্রাচীন মন্দির একটু একটু করে নষ্ট হচ্ছে, ক্ষয়ে যাচ্ছে তার গায়ের কারুকাজ বাসিন্দাদের চোখের সামনেই। অবহেলায়, অনাদরে জীর্ণ চেহারা সিউড়ি সোনাতোড় পাড়ার শতাব্দী প্রাচীন দামোদর মন্দিরের।
এই মন্দিরের বাইরের অংশ দেখলেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। মন্দিরের দেওয়াল থেকে খসে পড়েছে একাধিক টালি। মন্দিরের বাইরে লাগানো সংক্ষিপ্ত পরিচয় ফলকটিকেও কে বা কারা নষ্ট করে ফেলেছে বলে অভিযোগ। বাইরে থেকে কেউ এই মন্দির দেখতে এলে এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানার উপায় নেই। অথচ এই মন্দির ও সংলগ্ন অংশটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের অধীনে রয়েছে।
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা শ্রীলা বসু দীর্ঘদিন ধরে বাংলার প্রাচীন মন্দির নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই আটচালা মন্দিরটির অন্যতম বিশেষত্ব হল এটিকে টেরাকোটার মতো দেখতে লাগলেও আসলে এই মন্দিরগাত্রের কাজ টেরাকোটার নয়। ফুলপাথর নামে এক নরম পাথরের উপর মন্দিরের কারুকার্য তৈির। উত্তর-পশ্চিম বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড এলাকায় এই ফুলপাথরের মন্দির দেখা যায়। টেরাকোটার তুলনায় এটি বেশি টেকসই।’’
মন্দিরের কারুকার্যের মধ্যে বৈষ্ণব প্রভাব স্পষ্ট। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের প্রায় সমস্ত মন্দিরের ক্ষেত্রেই এই বৈষ্ণব প্রভাব অনেক বেশি। এখানেও রাধাকৃষ্ণের প্রেম, অনন্ত সজ্জায় বিষ্ণু, রাসমণ্ডল প্রভৃতি অলঙ্কৃত রয়েছে। মন্দিরে কোনও বিগ্রহ না থাকলেও এটি যেহেতু দামোদর মন্দির নামে পরিচিত, ফলে মনে করা হয় এটি কৃষ্ণের মন্দির ছিল। শ্রীলাদেবীর অভিমত, “এই মন্দিরের গায়ে যেহেতু কোনও সময়কাল লেখা নেই, ফলে নির্দিষ্ট ভাবে এটি প্রতিষ্ঠার সময় বলা সম্ভব না। তবে মন্দিরের ধরণ ও কাজ দেখে একে অষ্টাদশ শতকের মন্দির বলেই মনে হয়।”
পুরাতত্ত্ব বিভাগেরও দাবি, এটি বীরভূম জেলার প্রাচীনতম আটচালা মন্দির। ফুলপাথরের মন্দির হওয়ায় এটি খুব বেশি ক্ষয়ে যায়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন রক্ষীবিহীন অবস্থায় থাকায় বহু মানুষের অবাধ যাতায়াত ঘটেছে এখানে। এমনকি এই অবস্থায় থাকলে মন্দিরের গায়ে কারুকার্যগুলিও চুরি হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মন্দিরে একজন রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তিনি আসার পরে ভিতরে মানুষের যাতায়াত বা মন্দিরের সামনে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখার প্রবণতাও কিছুটা কমেছে। কিন্তু দর্শনার্থীদের বিশেষ কোনও ভিড় না থাকায় মন্দির পড়ে আছে একাকী।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, ওই মন্দিরের গায়ে যাতে ছত্রাক জমতে না পারে তার জন্য রাসায়নিক ছড়ানো হয়েছিল। মন্দিরের কিছু অংশ আগে মেরামতও হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই মন্দির সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের ফলকটি নতুন করে বসানো হবে। তবে স্থানীয়দের দাবি, মন্দিরটিকে সাজিয়ে তাকে একটি পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়া হোক। মন্দিরের সামনে আলোর ব্যবস্থা করা হোক। তাঁরা চান, এমন একটি প্রাচীন স্থাপত্য যাতে প্রচারের অভাবে হারিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দিক পুরাতত্ত্ব বিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy