Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Dacoity

ইঞ্জেকশনে বেহুঁশ করে ‘লুট’, আয়কর দফতরের নাম করে হানা দিল ডাকাতের দল!

সৌমেনবাবু এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলে পরিচিত। স্ত্রী চৈতালিদেবী বাড়িতে বিউটি পার্লার চালান। এ দিন সকালে পরিচারিকা এক দফা কাজ সেরে বেরিয়েছিলেন।

বিধ্বস্ত: চৈতালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

বিধ্বস্ত: চৈতালিদেবী। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০০:৫৯
Share: Save:

আয়কর দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকেছিল জনা আটেক যুবক। একা পেয়ে গৃহকর্ত্রীর হাত-পা বেঁধে ফেলে তারা। ইঞ্জেকশন দিয়ে তাঁকে সংজ্ঞাহীন করে যথেচ্ছ লুটপাট চালিয়ে চম্পট দেয়। রবিবার সকাল ৭টার কিছু পরে বাঁকুড়া শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ইদগামহল্লায় ব্যবসায়ী সৌমেন দত্তের বাড়িতে এ ভাবে ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে এলাকায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা অধরা।

সৌমেনবাবু এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বলে পরিচিত। স্ত্রী চৈতালিদেবী বাড়িতে বিউটি পার্লার চালান। এ দিন সকালে পরিচারিকা এক দফা কাজ সেরে বেরিয়েছিলেন। সারেঙ্গায় কাপড়ের দোকানে যাবেন বলে মেয়ে করিশ্মাকে গাড়িতে চাপিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সৌমেনবাবু। বাড়িতে একাই ছিলেন চৈতালিদেবী। তাঁর দাবি, তখন হানা দেয় ডাকাত দল।

চৈতালিদেবী জানান, কলিং বেলের আওয়াজ শুনে তিনি দরজা খোলেন। দেখেন, ৭-৮ জন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তারা সকলেই সাদা জামা আর কালো ট্রাউজ়ার পরে ছিল। নিজেদের ‘আয়কর দফতরে’র আধিকারিক বলে পরিচয় দেয় অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তিরা। এক জনের গলায় ঝোলানো ছিল ‘পরিচয়পত্র’।

চৈতালিদেবীর বর্ণনায়, ‘‘দরজা একটু খুলতেই ওরা বলে ‘ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে আসছি। আপনার বাড়িতে তল্লাশি চালাব’। আমি সাফ জানাই, বাড়িতে কেউ নেই। স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দিতে পারি না।” এর পরে চৈতালিদেবী তাঁর স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলে তারা জানায়, কাউকে ফোন করা যাবে না। ওই গৃহকর্ত্রী বলেন, “এর পর জোর করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে ওরা। আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। আমার গলা চেপে ধরে। হঠাৎ বুঝতে পার, সূঁচ ফুটিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে আমাকে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে সংজ্ঞা হারাই।”

চৈতালিদেবীর দাবি, দুষ্কৃতীরা ঘণ্টা খানেক ধরে লুটপাট চালিয়ে চম্পট দেয়। যাওয়ার সময় বাড়ির ঘরের দরজা ও সদর দরজা বন্ধ করে গিয়েছিল তারা। তাঁর কথায়, ‘‘হুঁশ ফিরতে দেখি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছি।’’ চিৎকার করলেও প্রতিবেশীরা কেউ শুনতে পাননি। এরই মধ্যে পরিচারিকা ফিরে আসেন। গৃহকর্ত্রীকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীদের ডাকেন তিনি। খবর যায় পুলিশে। শুরু হয় তদন্ত। চৈতালিদেবীকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। চিকিৎসার পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।

দুষ্কৃতীদের হদিশ পেতে ঘটনাস্থলে আনা হয়েছিল পুলিশ কুকুর। চৈতালিদেবীকে যে গামছা দিয়ে বাঁধা হয়েছিল, তার গন্ধ শুঁকে পুলিশ কুকুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলি পথ ধরে স্কুলডাঙা এলাকায় গাঁধীবিচার পরিষদের উল্টো দিকে এসে থমকে দাঁড়ায়। ওই গলিপথে একটি হোটেল রয়েছে। হোটেলের ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্রের সন্ধানে সৌমেনবাবুর বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা তদন্ত চালান জেলা পুলিশের কয়েক জন আধিকারিক। বিকেলে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সৌমেনবাবু। জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গৃহকর্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।’’

চৈতালিদেবীর পড়শিদের একাংশের দাবি, সৌমেনবাবু যে গাড়ি ব্যবহার করেন, ঠিক সেই রঙের গাড়িতে চড়ে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। গাড়িটি সৌমেনবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন সৌমেনবাবুর গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সৌমেনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈঠকখানার একটি টেবিলে গয়নার বাক্সের ঢাকনা-সহ কিছু কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dacoity Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy