পুরুলিয়ায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে শুরু করে আবাস যোজনায় গোলমাল—সব ক্ষেত্রে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি জড়িত। সোমবার পুরুলিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অভিযোগ তুললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তোলা সিপিএমের নেতাদের মুখে মানায় না।
এ দিন পুরুলিয়া শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ‘পরিকল্পিত’ ও ‘রাজনৈতিক’ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সেলিম। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও শিক্ষক-নিয়োগের দুর্নীতিতে জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, “এই দুর্নীতি শুধু একা পার্থ চট্টোপাধ্যায় করেছেন! একা মানিক ভট্টাচার্য করেছেন! এখন বিজেপির নকল নেতা সেজে শুভেন্দু হইহই করছেন। পুরুলিয়া জেলাতেই তো অবৈধ ভাবে মেদিনীপুরের লোকজনদের নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে তাঁদের আবার নিজেদের জেলায় ফেরতও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
ঘটনা হল, ২০১৭-১৬-তে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের সময়ে মেদিনীপুরের প্রার্থীদের পুরুলিয়ায় নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে সময়ে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের তরফে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দুই। জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দলীয় লাইন অনুযায়ী শিক্ষক-নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শাসকদল ও প্রধান বিরোধীকে একই বন্ধনীতে ফেললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার যদিও দাবি, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সিপিএমের নেতাদের মানায় না। তবে শুভেন্দু অধিকারী যখন জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন, সে সময়ে মেদিনীপুরের প্রার্থীরা পুরুলিয়ায় প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছিলেন। জেলার চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন দেখে আমরা সে সময়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।”
তবে দলের নেতাকে শিক্ষক-নিয়োগের দুর্নীতিতে জড়িয়ে সিপিএম বাজার গরম করার চেষ্টা করছে দাবি করে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসানোর জন্য গোটা রাজ্য সরকার নেমে পড়েছে। মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে ওঁর বিরুদ্ধে। তার পরেও শুভেন্দুবাবু দুর্নীতিগ্রস্ত বলে প্রমাণ করতে পারেনি শাসকদল। এখন সিপিএম ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।”
এ দিন আবাস যোজনা থেকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গেও এক যোগে তৃণমূল ও বিজেপিকে বিঁধেছেন সেলিম। তাঁর দাবি, রাজ্যে বিজেপি ‘নকল’ বিরোধীর ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি কয়লা পাচার-কাণ্ডে তৃণমূলের ‘মাথা’রা জড়িত বলে দাবি তাঁর।
এর আগে, জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে বারেবারেই কয়লা পাচার নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জড়িত বলে দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। পরে, ইডি দিল্লিতে ডেকে পাঠায় সুজয়কে। এ দিন সেলিম বলেন, “আমরা দলগত ভাবে পুরুলিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি করেছি। জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের কাছে বিভিন্ন দাবি, সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু শুনবে কে? জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিজেই তো ইডির দফতরে হাজিরা দিচ্ছেন।”
সুজয়ের ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য পাল্টা দাবি, ইডির কাছে সব তথ্য দিয়েছেন তিনি। গোটাটাই যে রাজনৈতিক চক্রান্তের ফল, সে কথা ইডি দফতর থেকে ফিরে সভা করে জানিয়েছেনও সভাধপতি। সুজয় এ দিন বলেন, “সিপিএম লোকজনের সমস্যা, দাবি বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে তথ্যপ্রমাণ নিয়ে জেলা পরিষদে আসুক। সব সময়েই তাদের স্বাগত। কিন্তু ওদের লোকজন জড়ো করে নিয়ে আসার ক্ষমতাটাই আর নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy