লাঠি হাতে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। সোমবার লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছরের মধ্যেই চিত্রটা বেশ বদলে গেল।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, বিরোধীদের মনোনয়নের সময় ‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে’। মনোনয়ন আটকাতে লাঠিসোটা, দা, টাঙ্গি হাতে ব্লক অফিসের কাছে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল দুষ্কৃতী বাহিনীকে। সোমবার সেই বীরভূমেরই লাভপুরে মোটা বাঁশ ও লাঠি হাতে মনোয়ননপত্র জমা দিল সিপিএম! অন্য দিকে, এ দিনই মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে নানুরে সিপিএম প্রার্থীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
তবে, অনুব্রত-হীন বীরভূমে লাভপুরের এই ঘটনা জেলার রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন ফেলেছে। কারণ, গত শনিবারও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। রবিবার এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ মাইক প্রচার এবং পথসভা করে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না বলেও দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দেন। তার পরেও এ দিন সিপিএমের লাভপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক মানিকচন্দ্র মণ্ডল, জেলা কমিটির সদস্য সৈয়দ মাহফুজুল করিমের নেতৃত্বে প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থক মিলিয়ে শতাধিক জন মোটা মোটা বাঁশ এবং লাঠি নিয়ে স্থানীয় পার্টি অফিস থেকে মিছিল করে লাভপুর ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। তৃণমূল কর্মীরা সেই সময় ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও কোনও অশান্তি হয়নি। মাহফুজুল বলেন, ‘‘এ বার বিজেপি কর্মীদের উপরে যে-ভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তার পরে খালি হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার ঝুঁকি নিতে পারিনি। আক্রান্ত হলে প্রতিরোধের জন্যই লাঠিসোঁটা হাতে তুলেছেন তাঁরা।
সিপিএম নেতৃত্বের আরও অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতে এ বার ‘অন্য কৌশল’ নিয়েছে তৃণমূল। তারা পুলিশকে দিয়ে ‘মিথ্যা’ অভিযোগে বিপ্রটিকুরী পঞ্চায়েত এলাকার বাবু শেখ নামে এক সিপিএম প্রার্থীকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করিয়েছে। ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিপিএম প্রার্থীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। পুলিশই বলতে পারবে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
ৈতাঁর সংযোজন, ‘‘বাঁশ নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার ব্যাপারটা এক সময় সিপিএমের সংস্কৃতি ছিল। তারা হয়তো সেটা ভুলতে পারেনি।’’ পুলিশের দাবি, ডাকাতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর নামে বিভিন্ন দুষ্কর্মের অভিযোগও রয়েছে।
লাভপুরে মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি না হলেও নানুরে হয়েছে। গত নির্বাচনে লাভপুরের মতো নানুর ব্লকেও বিরোধী দলগুলি কোনও আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। সিপিএমের নানুর এরিয়া কমিটির সদস্য মনিরুল হোসেনের অভিযোগ, ‘‘কীর্ণাহার থেকে ১২ জন প্রার্থীকে নিয়ে এ দিন আমরা নানুর ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলাম। নানুর ঢোকার মুখে আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মারধর করে। মহিলারাও নিগৃহীত হয়েছেন। গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।’’ তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।’’
এ দিন অবশ্য ওই ঘটনার পরে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখকে ব্লক অফিসের অদূরে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে উৎসাহিত করতে দেখা যায়। বিরোধী নেতাদের ফোনও করেন কাজল। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা যাতে ভোট প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারেন, তার জন্য আমাদের দলের নির্দেশ রয়েছে। আমি সেই নির্দেশ পালন করেছি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ এবং বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘বিষয়টি দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূল নেতারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি দেখাতে সেই দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিচ্ছেন। অথচ তাঁদের লোকেদের হাতেই বিরোধী নিগৃহীত হচ্ছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy