Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

দূষণ কম, ঝকঝকে শিল্পাঞ্চলের আকাশ

বছরের পর বছর ধরে শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনে মিশে গিয়েছিল দূষণ।

বাঁকুড়া সদর থানার কেশরার গৌরানডির স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আশপাশের এলাকার ছবি বদলে গিয়েছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বাঁকুড়া সদর থানার কেশরার গৌরানডির স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আশপাশের এলাকার ছবি বদলে গিয়েছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৩
Share: Save:

গাছের পাতায় কার্বনের কালো গুঁড়ো পড়া বন্ধ। নিশ্চিন্ত মনে খালি পায়ে ছাদে হাঁটাচলা করা যাচ্ছে। বুক ভরে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে না। দূষণের আস্তরণ ঝেড়ে ফেলে চেনা রং ফিরেছে শিমূল, পলাশ ফুলেও। লকডাউন-এ কলকারখানা বন্ধ থাকায় আমূল বদলে গিয়েছে বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল।

বড়জোড়া থেকে মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি থেকে বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ এখন অনেকখানি দূষণমুক্ত হওয়ায় এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন বাসিন্দারা।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘কলকারখানা ও যান চলাচল কমে যাওয়ায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম (পার্টিকুলেট ম্যাটার) ১০ এবং সূক্ষ্ম ধূলিকণা পিএম ২.৫ অনেকটাই কমেছে। এর ফলে সার্বিক ভাবে পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমেছে।’’

বছরের পর বছর ধরে শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনে মিশে গিয়েছিল দূষণ। সে জন্য তাঁরা স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো অ্যালয় কারখানাগুলিকেই মূলত দোষ দেন। গত ২২ মার্চ জনতা কার্ফু ও তার পরে ধাপে ধাপে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ায় সমস্ত কারখানাতেই তালা পড়েছে। তাতে ওই সব কলকারখানার শ্রমিক ও কর্মীরা দুশ্চিন্তায় পড়লেও আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে শান্তি পেয়েছেন অনেকে।

বড়জোড়া গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা শিপ্রা চট্টোপাধ্যায় জানান, বাড়ির ছাদ জুড়ে কেবলই কালো ধোঁয়ার আস্তরণ পড়ে থাকত। তাই জুতো ছাড়া ছাদে চলাফেরাই করা যেত না। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। তিনি বলেন, “লকডাউনের মাঝে ছাদ পরিষ্কার করেছি। এখনও ঝকঝকে রয়েছে। ইচ্ছে করেই খালি পায়ে হাঁটছি। হয়তো এই মুহূর্তটাই স্মৃতি হয়ে থাকবে।”

বড়জোড়ার প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মী বিজনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কালো ধোঁয়ার দূষণের জন্য বাড়ির সামনের দিকের জানলা কোনও দিনই খোলা রাখতে পারি না। এখন সারা দিন জানলা খোলা রেখে নির্মল বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি।” বড়জোড়ার ব্যবসায়ী পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সকালের দিকে নানা ধরনের পাখির কলতান শোনা যাচ্ছে, যা বহু দিন শুনতে পাননি ওই শিল্পাঞ্চলের মানুষ। অনেক অচেনা পাখি দেখতেও পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “দূষণ কমতেই নানা ধরনের পাখি আসতে শুরু করেছে এখানে।”

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সমীরকুমার পান্ডে জানান, দূষণের কবলে পড়ে বড়জোড়ার গাছের পাতা থেকে ফুল— এমনকি, পুকুরের জলও কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে। দূষণের সে ছবি এখন বদলে গিয়েছে। তিনি বলেন, “কোন ছেলেবেলায় পলাশ, শিমূলের রং দেখেছিলাম। কলকারখানা গড়ে ওঠার পরে ফুলেও থাকত কালো ধোঁয়ার আস্তরণ। লকডাউনের জেরে ফের সেই চেনা রং ফিরেছে ফুলে ফুলে।”

বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার এস এন প্রসাদ বলেন, ‘‘দূষণের জেরে ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। ইদানীং এমন রোগীর সংখ্যাও কমেছে। তবে লকডাউনের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকা, না কি স্বচ্ছ পরিবেশের জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় রোগীর সংখ্যা কমছে— তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর জ়োনের এক আধিকারিক জানান, কলকারখানা বন্ধ ও যানবাহন চলাচল এক ঝটকায় অনেকটাই কমে যাওয়ায় বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের মতো মানব দেহের পক্ষে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কমে গিয়েছে।

‘বাঁকুড়া চেম্বার অফ কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর যুগ্ম সম্পাদক (শিল্প) প্রবীর সরকারের দাবি, ‘‘কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় শিল্পাঞ্চলের আবহাওয়ার যে পরিবর্তন হয়েছে, তা মানতেই হবে। লকডাউন ওঠার পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়ম যাতে সবাই মানে, তা দেখতে হবে সরকারকে।’’

‘লকডাউন’-এ কলকারখানা বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাজার-হাজার শ্রমিক। এই পরিস্থিতিতে বড়জোড়ার সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের বক্তব্য, ‘লকডাউন’ এর পরে কলকারখানা ফের চালু হোক। তবে কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়া নজরদারি চালাক।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy