ঝুঁকি: সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়েই ভিড় করে যাত্রা। মাস্কও নেই অনেকের। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উপসর্গযুক্ত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও। জেলায় পুজো পরবর্তী সংক্রমণের ঢেউ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাবে কি না সেটা সময় বলবে। কিন্তু উপসর্গযুক্ত কোভিড পজিটিভ রোগী, যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো আবশ্যক হয়ে পড়েছে, তাঁদের সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়তে থাকায় চিন্তায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় অধীনে থাকা ৯০ শয্যা বিশিষ্ট বোলপুর কোভিড হাসপাতালে শনিবার পর্যন্ত উপসর্গযুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ জন। অন্যদিকে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় থাকা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জন। আপাতদৃষ্টিতে শয্যার অনুপাতে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা উদ্বেগ জনক না হলেও আসল ছবিটা উদ্বেগের বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে হয়তো এই সংখ্যক রোগী কোভিড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু সংখ্যাটা এক থাকলেও তাঁদের ৯০ শতাংশের কোনও উপসর্গ ছিল না। কেবল কোভিড পজ়িটিভ ছিলেন। সেরে গিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পেয়েছেন। কিন্তু এখন যাঁরা ভর্তি আছেন তাঁদের সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আগে এমনটা ছিল না বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বোলপুর কোভিড হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলছেন, ‘‘ক্রমশ উপসর্গযুক্ত রোগীর সংখ্যাটা বেড়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়তো পড়ছে না। তবে আক্রান্তদের অনেকেরই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে, যাঁদের চিকিৎসা বাড়িতে সম্ভব নয়।’’
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫০-এর বেশি আক্রান্তের। পাঁচ হাজারের বেশি বাসিন্দা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন বীরভূমের দুই স্বাস্থ্য জেলায় ৮০০-র বেশি সংক্রমিত করোনা রোগী রয়েছেন। তাঁদের ৭০ শতাংশের বেশি গৃহ নিভৃতবাসে রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কারও কারও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে সেটা আগাম আঁচ বা পরীক্ষা করার পরিকাঠামো বাড়িতে নেই। একমাত্র আক্রান্তদের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে এ ভাবে বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ মানছেন, এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে থাকা রোগীরা যাতে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণে থাকেন এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও সেটা বাস্তবে কতটা পালিত হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় আছে। জেলা জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আগামী দিনে আরও সমস্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। শুধু তাই নয়,পুজোর সপ্তাহে রাজ্যের যে সব জেলায় নমুনা পরীক্ষার নিরিখে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী সেই তালিকায় রয়েছে বীরভূমও।
চিন্তা বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও। এখনও করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে উপযুক্ত সচেতনতার অভাবে উদ্বেগ আরও বাড়ছে। সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যে কয়েকটি নির্দেশ পালন করার কথা সে সব বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় বেরোলেই তা দেখা যাচ্ছে। পুজোর আগে ও পরে বাজের হাটে ভিড় ছিলই, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পুজোয় জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন অনেকেই। শহরে সচেতনতার ছবিটা কিছুটা ভদ্রস্থ হলেও গ্রামের দিকে দূরত্ব বিধি বজায় রাখা বা মাস্ক পরার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। করোনার কোনও উপসর্গ দেখা দিলেও স্বেচ্ছায় কেউ পরীক্ষা করাতে আসছেন না। এর ফলে নিঃশব্দে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের। আরেকটি প্রবণতা কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর উপায় থাকলেও সেফ হোমে যেতে না চাওয়ার প্রবণতা। আড়ালে আক্রান্তের সংখ্যা বিপুল বৃদ্ধি বা নিভৃতবাসে থাকা রোগীদের মধ্যে হঠাৎ উপসর্গ বাড়তে থাকলে আগামী দিনের ছবিটা কী দাঁড়ায় চিন্তা সেটাই। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘জেলায় মোট ১৪০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল ছিল। দুবরাজপুর নিরাময় টিবি স্যানিটেরিয়ামে ১৫০ শয্যা সেফ হোমকেও কোভিড হাসাপাতালে রূপান্তরিত করার ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এর সঙ্গেই করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy