n কড়াকড়ি: মুখে মাস্ক না থাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। রঘুনাথপুরে রবিবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
এত দিন খোলামুখে ঘুরে বেড়ানো লোকেদের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিক ও কর্মীরা। কোথাও কোথাও ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের করোনা পরীক্ষাও করা হচ্ছিল। কিন্তু তাতে যে মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়েনি, তা ঘুরলেই মালুম হচ্ছিল। কিছু মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাবেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলছিলেন অনেকে। মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শনিবার নবান্না ঘোষণা করতেই ছবিটা সামান্য বদলাল। তবে তা বিশেষ আশাজনক নয়।
শহরাঞ্চলে মাস্ক পরার প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে মাস্কহীনদের সংখ্যাই বেশি। পুলিশও পথে নেমে এ দিন বেশ কয়েকজনকে ধরে আটক করে। সে খবর ছড়িয়ে পড়ায় বেলার দিকে রাস্তা অনেক জায়গায় ভিড় কমে। কিন্তু মাস্ক পরলেও চায়ের দোকানে মানুষের অহেতুক জটলাও উদ্বেগের বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
এ দিন বাঁকুড়ার থেকে পুরুলিয়ায় পুলিশের সক্রিয়তা বেশি দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘রবিবার জেলার সমস্ত থানা মিলিয়ে মাস্ক ছাড়া পথে বেরনো ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েচেন ২৪৪ জন।’’
এ দিন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শহরের বাজার-হাটে অধিকাংশকেই মাস্ক পরতে দেখা দিয়েছে। গত দু’দিন আগেও যা দেখা যাচ্ছিল না। বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্সের (ইন্ডাস্ট্রিজ) সাধারণ সম্পাদক মধুসুদন দরিপা বলেন, ‘‘শহরে ক্রেতাদের মাস্ক ছাড়া জিনিস দেওয়া হচ্ছে না।’’ পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রতন লিলহা জানান, কয়েক দিন আগেও লোকে মাস্ক পরছিলেন না। সংক্রমণ বাড়ায় লোকজন আগের থেকে অনেকটাই সচেতন হয়েছে।”
তবে অসচেতনতার ছবিও ঢের রয়েছে। বিষ্ণুপুরে অনেকে মাস্ক পরলেও বড়কালীতলা, শাঁখারি বাজারে এ দিন মাস্ক-হীনদের রবিবাসরীয় আড্ডা দেখা গিয়েছে। বোলতলা, চকবাজারে মাস্ক দেখা গিয়েছে কারও কপালে বা থুতনিতে। বলেন, ‘‘শনিবার পুলিশ মাইকে প্রচার করেছে। একটু পরেই পরব।’’ পাত্রসায়রের অনেকে মাস্ক পরলেও কয়েকজন জানান, জরিমানার ভয়েই তাঁরা পরেছেন (করোনার ভয় নয়)। আবার ইন্দাসের বামনিয়া হাটে বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল না। তালড্যাংরার পাঁচমুড়া হাটতলা থেকে ইঁদপুরের বাংলা আনাজের বাজার, হিড়বাঁধের হাতিরামপুর বাজারেও অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। খাতড়ার পাম্পমোড়ে রানিবাঁধের এক যুবক বলেন, ‘‘গরমে বেশিক্ষণ মুখ ঢেকে রাখা যাচ্ছে না।’’
তবে পুরুলিয়ায় এ দিন পুলিশের কড়া কড়া বিশেষ ছিল। আদ্রা, রঘুনাথপুর, ঝালদা, বান্দোয়ান, মানবাজার প্রভৃতি এলাকায় পুলিশের সক্রিয়তা দেখা যায়। সূত্রের খবর, এ দিন রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি থানা এলাকায় মাস্ক না পরায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ মোট ২৬ জনকে আটক করে। রঘুনাথপুর থানার সামনে মাস্ক না পরায় পুলিশ আটক করেছিল আনাই-জামবাদ থেকে রঘুনাথপুর শহরে বিয়ে বাড়িতে আসা ভাগবত কর্মকার নামের এক যুবককে। তিনি দাবি করেন, ‘‘মাস্ক পকেটে থাকলেও পরতে ভুলে গিয়েছি।’’ থুতনিতে মাস্ক থাকা রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দা বৃদ্ধ গিরিধারী মেটের দাবি, ‘‘গরম লাগায় মাস্ক খুলেছিলাম।’’ পুলিশ অবশ্য কোনও দাবিতেই সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।
মানবাজারে শনিবার সন্ধ্যাতেই অভিযান চালিয়ে মাস্ক না পরায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পরে তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়। ঝালদায় পথচলতি বেশির ভাগের মুখে মাস্ক থাকলেও বাঁধাঘাট, বাসস্ট্যান্ড, স্কুলমোড়ে অভিযান চালিয়ে কয়েক জনকে বিনা মাস্ক থাকায় আটক করে পুলিশ। সকালে বান্দোয়ানে চকবাজারেও কয়েক জনকে আটক করা হয়।
দুই জেলাতে এ দিন পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে মাস্ক বিলি, সচেতনতার প্রচার চলেছে। মানবাজার ১ ব্লকে ১২টি শবর অধ্যুষিত গ্রামে ১,৩৫০ জনকে মাস্ক দিয়েছে প্রশাসন। অনেকে আবার মাস্ক ঠিক মতো পরছেন না বলে জানাচ্ছেন পেশায় চিকিৎসক তথা বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়। এ দিন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ নামে একটি সংগঠন যৌথ ভাবে পুরুলিয়া শহরের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে লোকজনকে ঠিক ভাবে মাস্ক পরানো শেখায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy