হাঁটাপথেই গন্তব্যে, সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দশ দিন আগেই। হাতের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরার কোনও উপায় নেই। ভিন্ রাজ্যে আরও বিশ দিন গৃহবন্দি থেকে কী ভাবে খাবার জোটাবেন, সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম ছুটেছে লালন শেখ, আব্দুল করিম, রোসাই খানদের। বীরভূম থেকে রাজমিস্ত্রি ও জোগাড়ের কাজ করতে তাঁরা মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। তার জেরে বীরভূমের বিভিন্ন ব্লকের বহু মানুষ ভিন্ রাজ্যে আটকে রয়েছেন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে সংক্রমিত রাজ্য মহারাষ্ট্রেও এই জেলার বহু মানুষ রয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন লালনদের মতো শতাধিক পুরুষ-মহিলা। এখন তাঁরা মুম্বইয়ের মসজিদ বন্দরে ছ’টি ঝুপড়িতে (এক একটিতে ১৫-২০ জন) আছেন। বেকায়দায় সকলেই। বৃহস্পতিবার ফোনে জানালেন, গাড়ি ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেননি। লালনের কথায়, “একে পর্যাপ্ত টাকা নেই। জিনিসের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বাইরের দোকানে খাবার কিনতে গেলে পুলিশ আমাদের উপরে লাঠিচার্জ করছে। এ ভাবে কী করে বাঁচব! করোনারভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার থেকেও বেশি ভয় এখন না খেতে পেয়ে মরার। আমাদের জন্য রাজ্য বা জেলা প্রশাসন কি কিছু করবে?”
জেলা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, জেলার মানুষ অসুবিধায় রয়েছে, এই খবর পাওয়ার পরে চুপ করে বসে থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ওই রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। অথবা ওঁরা রাজ্যের হেল্পলাইন নম্বর বা জেলা প্রশাসনের যে কোনও ধাপে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে সিউড়ি ১ ব্লকের বাতাসপুর থেকে মাস দেড়েক আগে লালন শেখ মুম্বই যান। মাস দুয়েক আগে ওই ব্লকেরই গরুইঝোড়া গ্রামের আব্দুল করিম, পাড়ুইয়ের কেশবপুরের রোসাই খানও গিয়েছেন রাজমিস্ত্রির কাজে। তাঁরা বলছেন, “করোনা ছড়িয়ে পড়ছে শুনছিলাম। হুট করেই ২০ তারিখ থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। সবাই বলল, দশদিন পর সব খুলবে। কিন্তু এখন সেটা তিন সপ্তাহ হয়ে গেল। বাড়ি ফেরার সুযোগ পাইনি। টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। চাল আলু আনাজের দাম দ্বিগুণ।”
ওই দলেই রয়েছেন ময়ুরেশ্বরের যুবক শেখ হাসিরুল ও তাঁর বাবা, মামা। হাসিরুল বলছেন, “এখনই এক জনের খাবার দুজনে ভাগ করে খাচ্ছি। দিন কয়েক পরে কী হবে, জানি না।” পাড়ুই থানার কেশবপুর থেকে যাওয়া মসাই খান বলেন, “অনেকে স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে এখানে আটকে রয়েছে। এ রকম চললে করোনায় না মরলেও না খেতে পেয়ে মরে যাব। স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু বোঝানোও যাচ্ছে না।”
জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ জানান, বাইরে যাঁরা আটকে আছেন, তাঁদের কথা ইতিমধ্যেই ভেবেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তিনি এ রাজ্যের আটকে পড়া মানুষের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জেলা প্রশাসনের তরফেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাইরে আটকে পড়া মানুষজনের পরিবার যদি জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করেন, সেটা রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy