সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগকে ঘিরে বিতর্কে জড়াল পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। বিতর্ক তৈরি হয়েছে জেলা পরিষদের দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে।
শুক্রবার বিকেলে জেলা পরিষদের একাধিক দেওয়ালে সাঁটানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে— ‘এই মুহূর্তে হাতোয়াড়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানার দরকার থাকলে, মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত’।
শনিবার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শান্তিরামবাবু। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই নিয়োগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি মেডিক্যালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হলেও এ ভাবে আমার নামে বিজ্ঞপ্তি জারি করা, আমাকে অপদস্থ করার অপচেষ্টা বলেই মনে হয়। ওই নিয়োগ রোগীকল্যাণ সমিতি নয়, স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। এর সঙ্গে রোগীকল্যাণ সমিতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ অন্য দিকে, জেলা পরিষদ সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ওই নিয়োগের খবর জানতে জেলা পরিষদে অনেকেই ভিড় করছেন। প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে। এখন কোনও অবস্থাতেই ভিড় কাম্য নয়। জেলা পরিষদও নিয়োগ করছে না। শান্তিরামবাবু রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। তাই ওই নিয়োগের ব্যাপারে কারও জিজ্ঞাস্য থাকলে, তিনিই জবাব দিতে পারবেন। সেটাই জানানো হয়েছে।’’
মেডিক্যালের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মী নিয়োগ ঘিরে গত অক্টোবর মাস থেকে জলঘোলা হচ্ছে। কিছু ছেলেমেয়ে ওই পদে কাজে যোগ দিতে এসেছেন শুনে প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের খবর পেয়ে জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য হলধর মাহাতো, জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া সেখানে গিয়ে তাঁরাও ওই নিয়োগের ব্যাপারে অন্ধকারে বলে দাবি করেন। সে দিনের মতো কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে স্থগিত হয়ে যায়। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই নিয়োগ করছে।
চলতি মাসের গোড়ায় ফের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে স্থানীয় মানুষজন সে দিনও মেডিক্যালের দরজায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠলেও, নিয়োগে তাঁদের কেন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না? এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশকেও সে দিন বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানাতে দেখা গিয়েছিল। সে দিন সেখানে গিয়ে সভাধিপতি সুজয়বাবু দাবি করেছিলেন, বিধি মেনেই নিয়োগ হচ্ছে। একই দাবি করেন ওই সংস্থার তরফে ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে কম-বেশি ৮৪ জনকে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাতে পুরুলিয়া জেলার অনেকেই রয়েছেন।’’
নিয়োগকে ঘিরে জেলা পরিষদের জারি করা বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে এ বার দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই বিজ্ঞপ্তির কারণ কী তা আমিও জানি না। তবে নিয়োগ ঘিরে নানা অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি। এটা কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে ভিজিল্যান্স কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আমি সেখানে প্রাথমিক ভাবে কথা বলেছি।’’
তবে শান্তিরামবাবুর নাম জড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার অর্থ অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের দলনেতা হলধর মাহাতো বলেন, ‘‘জেলা পরিষদে ভিড় এড়াতে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কোনও ব্যক্তির নাম এ ভাবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না করলেই বোধ হয় ভাল হত।’’ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৌমেনবাবুও বলেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে কারও নাম করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটা শোভন নয়।’’
এ নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা। পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেডিক্যালে একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়োগ করছে। কিন্তু জেলা পরিষদের আগ বাড়িয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া দেখে, ‘ঠাকুর ঘরে কে’— ওই প্রবাদটি মনে পড়ে যাচ্ছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ওই বিজ্ঞপ্তিতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। মানুষ ভোটেই এ সবের জবাব দেবেন।’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি জেলা তৃণমূল সভাপতিকে জানাব। এ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিতে
রুচিতে বাধছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy