পৌষমেলার মাঠ সীমানা পাঁচিলে ঘেরার কাজ শুরু হল। রবিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
মেলার মাঠ পাঁচিলে ঘেরাকে ‘শান্তিনিকেতনের কৃষ্টির উপরে আঘাত’ বলেই মনে করছেন বর্তমান পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনী, আশ্রমিকদের অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে প্রতিবাদ জানিয়ে নানা ‘পোস্ট’, নানা লেখা ‘শেয়ার’ করেছেন। ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে পেজ তৈরি হয়েছে। এ সবের বাইরে সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধিতা তো আছেই।
শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতীর উদ্যোগে এই পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের সকাল থেকে। প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিরোধিতা। রবীন্দ্র শতবর্ষের সময় থেকে এই মাঠে হয়ে আসছে পৌষমেলা। প্রবীন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “বর্তমান উপাচার্য তো কারও কথা শোনেন না। যা ভাল মনে হচ্ছে, তাই করছেন। মেলার মাঠের মতো ঐতিহ্যশালী মাঠকে ঘিরে ফেলার কোনও যুক্তিই নেই।” প্রাতঃভ্রমণ বা খেলাধুলোর জন্য মেলার মাঠ বোলপুরবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন ‘মুক্তাঞ্চল’কে ঘিরে ফেলা অযৌক্তিক বলেই মত আরও অনেকের।
রবিবার সকালে সরাসরি উপাচার্যের কাছে মেলার মাঠ ঘিরে ফেলার কারণ জানতে চান কলাভবনের প্রাক্তনী শুভলক্ষ্মী গোস্বামী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রবীণ মহিলার প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়েই সেখান থেকে চলে যান উপাচার্য। কান্নায় ভেঙে শুভলক্ষ্মীদেবী বলেন, “উপাচার্যের এমন উদ্ধত আচরণ বিশ্বভারতীর বুকে অকল্পনীয়। এক এক জন উপাচার্য আসছেন, আর পাঁচিল তুলে রবীন্দ্র-আদর্শকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন।” মেলার মাঠ ঘিরে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপকদের নীরবতা নিয়েও কটাক্ষ করেন।
ব্যবসায়ী সমিতির তরফ থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। শনিবার কাজ শুরুর পরেই ব্যবসায়ী সমিতি এই কাজের ঠিকাদারকে মারধর করে কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, “ঐতিহ্যবাহী স্থানকে ঘিরে ফেলা বোলপুরবাসী কোনও দিনই বরদাস্ত করবে না। আইনের পথে যা যা করা সম্ভব করব।” মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া আটকাতে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপেও ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে পেজ তৈরি করা হয়েছে। বোলপুর এবং জেলার বাইরের নানা শ্রেণির মানুষ মেলার মাঠ ঘিরে ফেলার বিরুদ্ধে এই পেজগুলির মাধ্যমেও সরব হচ্ছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতীর পঠন-পাঠন এখন বন্ধ। অধিকাংশ পড়ুয়া ক্যাম্পাসে নেই। তার পরেও স্থানীয় পড়ুয়াদের একাংশ পাঁচিল দেওয়ার বিরোধিতায় নেমেছে। এঁদের মধ্যে সোমনাথ সৌ বলেন, “পড়ুয়াদের না-থাকার সুযোগ নিয়ে মাঠ ঘিরে অচলায়তন তৈরির চেষ্টা করছে বিশ্বভারতী।’’ জনমত গড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন অনেকে।
শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সাম্মানিক সম্পাদক অনিল কোনার অবশ্য নিরাপত্তার যুক্তিকেই সামনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেলার মাঠে সন্ধ্যায় বা রাতে নানা অসামাজিক কাজকর্ম হয়। সার্বিক নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখেই ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা সবটা না জেনেই করছেন।”
এ দিকে, রবিবার থেকে রাতেও কাজ চলবে বলে জানা যাচ্ছে। সেই কারণে মাঠ সংলগ্ন ইলেক্ট্রিক পোস্টে আলো লাগানো হয়েছে। একইসঙ্গে কাজের দেখভালের জন্য থানার ঠিক বিপরীতে মাঠের একটি অংশে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy