Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
৭০ কোটি টাকা বকেয়া
Wages

১০০ দিনের কাজের মজুরি ঘিরে চাপান-উতর

যদিও এই দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা। তিনি দাবি করেন, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হওয়া মাত্রই কেন্দ্রের পোর্টালে সমস্ত তথ্য আপলোড করে দেওয়া হয়।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বাঁকুড়া জেলার ছাতনার খড়বনার বাসিন্দা সুভাষ মাল। লকডাউনে বাড়ি ফিরে আসার পরে, তাঁর একশো দিনের কাজই ভরসা। অথচ, চার সপ্তাহ ওই প্রকল্পে কাজ করে এক টাকাও পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর দাবি, দোকানে ধার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আনাজপাতি কেনারও টাকা নেই। শুধু সুভাষবাবুই নন, একশো দিনের প্রকল্পের কাজ করে বাঁকুড়া জেলার কয়েক লক্ষ শ্রমজীবী মজুরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অগস্টের মাঝামাঝি থেকেই একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা জুড়ে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ বকেয়া টাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। শ্রমিকদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে বহু পঞ্চায়েতই বকেয়া মজুরি মেটানোর আগে নতুন করে এই প্রকল্পে কাজ ধরতে চাইছে না।

বাঁকুড়া ২ ব্লকের বিকনা পঞ্চায়েতের প্রধান কার্তিক মাল জানান, অগস্টের মাঝামাঝি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিকনা পঞ্চায়েতেই অন্তত ৭ লক্ষ টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। হাজারখানেক শ্রমিক সমস্যায় পড়েছেন। কার্তিকবাবু বলেন, “শ্রমিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ছি। সমস্ত বকেয়া মজুরি না মেটানো পর্যন্ত কাজ ধরতে পারছি না।”

সমস্যা কোথায়?

বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “নিয়ম মেনেই সব কাজ হচ্ছে। তা-ও প্রায় এক মাস মজুরির টাকা মিলছে না। সমস্যাটি রাজ্য প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে।’’ রাজ্যের শাসকদল এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির কাজিয়া। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। দ্রুত মজুরি না দেওয়া হলে সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।” তা মানতে নারাজ বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে কথা বলেছি। এই প্রকল্পে অর্থের কোনও কমতি নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী করোনা পরিস্থিতির জন্য নতুন করে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের তরফেই একশো দিনের কাজের তথ্য ঠিক সময়ে কেন্দ্রের পোর্টালে আপলোড করা হচ্ছে না বলেই সমস্যা হচ্ছে।”

যদিও এই দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা। তিনি দাবি করেন, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হওয়া মাত্রই কেন্দ্রের পোর্টালে সমস্ত তথ্য আপলোড করে দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, “সুভাষবাবু এই কাজের ধরন সম্পর্কে না জেনে ভিত্তিহীন কথা বলছেন।” চলতি ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে বাঁকুড়া জেলাকে একশো দিনের প্রকল্পে প্রথমে ১ কোটি ১৩ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই জেলা যা ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে ২ কোটি ২৬ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়া জেলাকে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের দাবি, “একশো দিনের প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতির বড় ভরসা। করোনা পরিস্থিতিতে এই কাজের উপরে মানুষের নির্ভরশীলতা আরও বেড়েছে। অথচ, এই কাজে যদি মজুরি সময় মতো না মেলে, তা হলে গ্রামীণ অর্থনীতি বসে যাবে। দ্রুত শ্রমিকদের মজুরি মেটানো হোক।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Daily Labourer Hundred day Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE