তালাবন্ধ ঝালদার পুরপ্রধানের কক্ষ | ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় |
সত্যিই কি তৃণমূল পুরপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে ঝালদা পুরসভা দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল? এই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, পুরবোর্ড দখলের চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। কিন্তু তিনি এবং কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী মিলে কলকাতায় গিয়ে তা আটকেছেন। যদিও যে পুরপ্রতিনিধিদের নাম এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে, তাঁরা এমন ঘটনার কথা খারিজ করে দিয়েছেন। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানিয়েছেন, এমন কোনও চেষ্টার কথা তিনি জানেন না। তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, কেউ স্বেচ্ছায় তৃণমূলে আসতে চাইলে স্বাগত। ঝালদা পুরসভার গত কয়েক দশকের ঘটনাবলী থেকে দেখা যায়, দল ভাঙিয়ে অনেক বারই এই বোর্ড বেদখল হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, এ বারেও তৃণমূলের এক বিধায়ক এই কাজটি করতে গিয়েছিলেন। তাই কংগ্রেসের একমাত্র পুরসভা ঝালদা কত দিন ‘হাতে’ থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকে।
গত বছর পুরভোটে ঝালদায় তৃণমূল ও কংগ্রেস ৫টি করে আসন জেতে। দু’টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জেতেন। তাঁদের মধ্যে শীলা চট্টোপাধ্যায় গণনার দিন তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু বোর্ড গঠনের মুখে খুন হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এক নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকারকে পাশে পেয়ে পুরবোর্ড গড়ে তৃণমূল। কিন্তু গত অক্টোবরে সোমনাথ ও শীলা কংগ্রেস শিবিরে যান। তারপরেই অনাস্থা এনে পুরসভা দখলের দাবি তোলে কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তাকে বৈধতা না দেওয়ায় জল গড়ায় হাই কোর্টে। শেষে হাই কোর্টের নির্দেশে পুরপ্রধান হল কংগ্রেসের তরফে নির্দল শীলা চট্টোপাধ্যায়। আর কংগ্রেসে যোগ দেন সোমনাথ।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পুরসভার তহবিল আটকে দিয়েছে, এই অভিযোগে সরব হন কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যেই জল্পনা ছড়ায়, একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে কংগ্রেসের দুই পুরপ্রতিনিধিকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য সক্রিয় হয়েছেন শহরের এক তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি। জল্পনার মধ্যে ২০ জুলাই কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি মিঠুন কান্দু, বিজয় কান্দু, পিন্টু চন্দ ও সোমনাথ কর্মকার দিঘা চলে যান। তবে একুশের মঞ্চে কিছু না হওয়ায় দলবদলের চর্চায় জল পড়ে। কিন্তু রবিবার কলকাতায় পুরপ্রধান ও চার কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধির উপস্থিতি ঘিরে এ নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।
নেপাল মাহাতোর অভিযোগ, জেলার এক তৃণমূল বিধায়ক তহবিল পাইয়ে দেওয়ার নাম করে পুরপ্রধান ও দলের চার পুরপ্রতিনিধিকে ভুল বুঝিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় খবর পাই, তৃণমূল ওঁদের দলে টানতে ভুল বুঝিয়ে কলকাতায় এনে এমএলএ হস্টেলে আলোচনায় বসেছে। আমাদের নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছই। দলের তিন কাউন্সিলরকে বোঝানোর সময় পুরপ্রধান-সহ দু’জনকে তৃণমূলের লোকজন শহরের অন্যত্র একটি অতিথি আবাসে সরিয়ে নেন। সেখানে গিয়ে ফের দু’জনকে বোঝানো হয়। তাঁদের বলেছি, তহবিলের সমস্যা থাকলে আমরা লড়াই করব। তার পর পাঁচ জনই এ দিন ঝালদায় ফিরছেন।’’
যদিও ওই পাঁচ জন তৃণমূল-যোগ নিয়ে কার্যত নীরব। পুরপ্রধান শীলার দাবি, ‘‘আমি দিঘায় যাইনি। বিশেষ কাজে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেখানেই বাকিদের সঙ্গে দেখা হয়। নেপালদা এসে জানান, পুরসভার তহবিলের সমস্যার বিষয়টি তিনি দেখবেন।’’ এ দিন ঝালদায় ফেরত যাচ্ছেন, জানিয়েছেন শীলা। সোমনাথের দাবি, ‘‘চার কাউন্সিলর মিলে দিঘায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। কাজ পড়ে যাওয়ায় কলকাতায় যাই। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা উঠছে কেন, বুঝছি না। আমরা সবাই এককাট্টা।’’ মিঠুন এবং বিজয়ও বলছেন, ‘‘দিঘায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। কলকাতায় যাইনি।’’ যদিও নেপালের দাবি, তাঁর সঙ্গেই ঝালদা ফিরছেন মিঠুন, বিজয়রা।
এমন ভিন্ন সুরে অন্য ইঙ্গিত পাচ্ছেন জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, গত কয়েক দশকে দলবদলের ফলে বেশ কয়েক বার ঝালদা পুরবোর্ডে বদল হয়েছে। তাই এ যাত্রায় নেপাল মাহাতো দলের কাউন্সিলরদের ধরে রাখলেও পরে যে বোর্ডবদল হবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে নানা মামলা জড়িয়ে ফেলা বা কার্যত তহবিল-শূন্য অবস্থায় পুরসভা চালানোর মতো সঙ্কটও তৈরি করে চাপ দেওয়া হতে পারে, আশঙ্কা কংগ্রেসেই।
যদিও লাগাতার আইনি লড়াইয়ে ঝালদাকে কংগ্রেসের হাতে তুলে দেওয়ার নেপথ্যে থাকা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর দাবি, ‘‘ঝালদা পুরসভা ধরে রাখতে আইনি পথেই লড়ব। রাজ্যের থেকে পুরসভার তহবিল ছিনিয়ে আনতে আদালতে যাব।’’ তৃণমূলের ওই বিধায়ক ফোন ধরেননি। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘ঝালদার কাউন্সিলদের নিয়ে কী হয়েছে, জানি না। তবে কেউ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূলে আসতেই পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy