মেদিনীপুরের মঞ্চে অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারী ও সৌমিত্র খাঁয়ের পাশে সুদীপ মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
অমিত শাহের সভায়, শনিবার বিজেপিতে যোগ দিলেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। বুধবার শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সময়ে তাঁর সঙ্গে শুধু সুদীপ ছিলেন। পরে তিনিই সাংবাদিকদের শুভেন্দুর ইস্তফার প্রতিলিপি দেন। সেই থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। তবে সুদীপ তখন দাবি করেছিলেন, কাকতালীয় ভাবে শুভেন্দুর সঙ্গে বিধানসভায় দেখা হয়ে যাওয়ায় সঙ্গে গিয়েছিলেন।
দলবদলের পরে এ দিন সুদীপ বলেন, ‘‘মানুষকে নিয়েই রাজনীতি। মানুষের ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’’ বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শুক্রবার সুদীপ ছিলেন কলকাতার এমএলএ হস্টেলে। রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি অতিথি আবাসে ওঠেন। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের কলেজ মাঠে অমিত শাহের সভাস্থলে পৌঁছন। সন্ধ্যায় আবার একটি অতিথি আবাসে উঠেছেন। রাতে সেখানেই থাকার কথা তাঁর।
এই দলবদল প্রসঙ্গে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা একটা বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। গিয়েছে, ভালই হয়েছে।’’ জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে দলের কোনও কর্মসূচিতে ছিলেন না সুদীপ। রাহুল গাঁধী যখন জেলায় আসেন, তখনও তাঁকে দেখা যায়নি। তলে তলে যে বিজেপির সঙ্গে যোগ ছিল, সেটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেল। সুদীপ বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’
২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেসের টিকিটে পুরুলিয়া বিধানসভাকেন্দ্র থেকে জয়ী হন সুদীপ। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপ রায় এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীরা সুদীপকে জেতানোর জন্য পরিশ্রম করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।’’
সুদীপের বক্তব্য, ‘‘এক জন সাধারণ বিরোধী বিধায়ক হিসাবে যা করা সম্ভব, কংগ্রেসের নিয়মনীতি এবং নির্দেশ মেনে এত দিন তা করে গিয়েছি। মানুষের জন্যও যা করার, সাধ্যমতো করেছি।’’ পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ সুদীপকে জিতিয়েছিলেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে গ্রহণ করেছেন। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’
তৃণমূল প্রতিষ্ঠার সময়ে শুভেন্দু যখন দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি, সুদীপ ছিলেন সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সভাপতির দায়িত্বে। ২০১৪ সালের গোড়ায় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সুদীপের সঙ্গে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়তে থাকে। কয়েকমাস পরেই কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। তার পরেও মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁর।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে খুবই সক্রিয় ছিলেন সুদীপ। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে দিল্লি গিয়ে তিনি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জল্পনা ছিল। সেই সময়ে দলবদল না হলেও ভোটে নিজের এলাকার বাইরে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে দেখা যায়নি সুদীপকে। ফল বেরোলে দেখা যায়, তাঁর নিজের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড ও তাঁর ভাই প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের (বিল্টু) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন কে পি সিংহ দেওয়ের ছেলে দিব্যজ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও। দিল্লির বেসরকারি ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন তিনি। দলের মধ্যেই তাঁর উপরে ‘বহিরাগত’ তকমা পড়ে গিয়েছিল। সে দিক দিয়ে ‘কাল্টু’ ডাকনামে সুদীপ ঘরের ছেলে হিসাবে প্রচার পেয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সেই সময়ে প্রচারে থাকা কর্মী-সমর্থকদের অনেকে তৃণমূল ও বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। ফলে, বিধানসভা ভোটের আগে বেশ অঙ্ক কষেই এই দলবদল। সুদীপ নিজে বলেন, ‘‘মানুষ পিসি-ভাইপোর সরকারকে হঠাতে চাইছে। সেটা কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্য বিজেপিতে যোগ দিলাম।’’
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অবস্থা বেহাল। আর সুদীপ সুযোগসন্ধানী। ক্ষমতা ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টায় শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপিতে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy