ঝালদা পুরভবনে পূর্ণিমাকে বুধবার বেলায় শপথবাক্য পাঠ করালেন পুরপ্রধান শীলা। দুপুরে শীলার পুরপ্রতিনিধি পদ খারিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে এসডিও-র অফিসে শুনানিতে গেলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝালদা পুরসভা দখলের পর থেকে বারবার কংগ্রেস কর্মীরা স্লোগান দিয়েছেন নিহত পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দুর নামে। বুধবার তপনের স্ত্রী পুরপ্রতিনিধি পূর্ণিমা কান্দুকে ঝালদার উপপুরপ্রধানের দায়িত্ব তুলে দিয়ে দলও কর্মীদের দাবিকে মর্যাদা দিল। সেই সঙ্গে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান পদে দুই মহিলাকে ঝালদার দায়িত্ব দিয়ে নারী শক্তির উপরে ভরসা রাখল কংগ্রেস। ঝালদায় এই প্রথমবার পুরপ্রধান পদে এক জন মহিলা বসলেন। জেলার নিরিখে পুরুলিয়া পুরসভায় ১৯৮১ সালে বামফ্রন্টের রেখা মল্লিক পুরপ্রধান হয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান পদে দুই মহিলা জেলায় এই প্রথম।
টানা তিন মাস ধরে জটিলতা চলার পরে হাই কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবার ঝালদার পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেন নির্দলের শীলা চট্টোপাধ্যায়। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ পুরভবনে চলে আসেন পূর্ণিমা-সহ কংগ্রেসের মোট ছয় পুরপ্রতিনিধি। আসেন শীলাও। নিয়ম মতো তিনিই পূর্ণিমাকে শপথবাক্য পাঠ করান। পুরভবন চত্বরে কিছু কর্মী-সমর্থকও ভিড় জমান।
পুরভবন সূত্রে খবর, শতবর্ষ প্রাচীন ঝালদা পুরসভায় এই প্রথমবার পুরপ্রধানের দায়িত্বে কোনও মহিলা। তবে উপপুরপ্রধানের দায়িত্বও যে কোনও মহিলার হাতে দেওয়া হবে, তা আন্দাজ করতে পারেননি অনেকেই। সে দিক থেকে কংগ্রেস চমক দিল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এর মাধ্যমে দু’টি লক্ষ্য পূরণ করল কংগ্রেস। প্রথমত, এই পুরসভা দখলের পিছনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে নির্দলের পুরপ্রতিনিধি শীলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তৃণমূল ত্যাগ করার পর থেকে শীলা ও তাঁর পরিবারের উপরে নানা ভাবে ‘চাপ’ এলেও তিনি কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়েননি। ফলে পুরপ্রধানের দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে যোগ্য সম্মান দিয়েছে কংগ্রেস। অন্য দিকে, দলীয় পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দুর হত্যার পর থেকে কংগ্রেস প্রচুর সাধারণ মানুষকে পাশে পেয়েছে। তাদের নিয়ে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে। তাতে ঝালদা শহর তো বটেই, আশপাশের গ্রামীণ এলাকার কংগ্রেস কর্মীদের মনোবলও চাঙ্গা হয়েছে। এখনও ঝালদার মানুষ তপনের পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল। পূর্ণিমাকে পুরসভার অন্যতম প্রধান মুখ করে তাঁদের সেই আবেগকে মর্যাদা দিল কংগ্রেস।
পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘পূর্ণিমা তাঁর স্বামীকে হারানোর পরেও যে ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে এসেছেন, তা দৃষ্টান্ত। শীলা নির্দলের প্রতীকে জিতলেও বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও যে ভাবে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন, তাতে নারী শক্তির এই ভূমিকাকে মর্যাদা তো দিতেই হয়।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অন্য একাংশের অনুমান, পূর্ণিমার হাতে পুরসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিয়ে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তপন কান্দু হত্যার বিষয়টিকে প্রচারে আনতে পারে কংগ্রেস। তাতে সাধারণ মানুষকে এককাট্টা করতে কংগ্রেস কর্মীদের সুবিধা হবে।
সে নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘এই জয় আমরা তপনকেই উৎসর্গ করছি। এই জয় সারা বাংলাকে পথ দেখাবে।’’ দুই মহিলার নেতৃত্বেই ঝালদায় সুদিন ফিরবে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি বিপ্লব কয়াল।
শপথ নেওয়ার পরে পূর্ণিমা বলেন, ‘‘স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করাই আমার মূল লক্ষ্য।’’ পুরপ্রধান শীলার বক্তব্য, ‘‘দলমত বিচার না করে মানুষের জন্য কাজ করবে এই পুরবোর্ড।’’ তাহলে কি সমস্যা-সমাধানের ক্ষেত্রে মহিলারা অগ্রাধিকার পেতে চলেছেন? শীলার অবশ্য দাবি, ‘‘কোনও বিভাজন নয়। মানুষের পুরবোর্ড। তাই সবার জন্যই কাজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy