Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ইতিহাস রক্ষার দায় কার, প্রশ্ন বিষ্ণুপুরে

দেবী মৃণ্ময়ীর মন্দিরে দুষ্কৃতী হানা দিয়েছে আগেও। বিষ্ণুপুরের বেশ কিছু কালীমন্দিরে বিগ্রহের গয়না চুরির ঘটনা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ফলে মোটেই স্বস্তিতে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই, দাবি শহরবাসীর।

তিমির: সন্ধ্যা নামলে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেয়ে যায় রাসমঞ্চের অনেকটা জুড়ে। ছবি: শুভ্র মিত্র

তিমির: সন্ধ্যা নামলে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেয়ে যায় রাসমঞ্চের অনেকটা জুড়ে। ছবি: শুভ্র মিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

শহরের যে দিকে দু’চোখ যায়— শুধুই মন্দির। শহর ছাড়িয়ে গ্রামে-গঞ্জে গেলেও নজরে আসবে মন্দির। মল্লরাজাদের তৈরি মন্দিরগুলির জন্যই পর্যটকদের কাছে বিষ্ণুপুরের অন্য নাম ‘মন্দিরনগরী’। প্রাচীনত্বের দিক থেকে মন্দির বা মন্দিরের বিগ্রহের গুরুত্ব কম নয়। কিন্তু নিরাপত্তা কি যথেষ্ট? নতুন করে সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেবী মৃণ্ময়ী মন্দিরের চুরির ঘটনা।

পুলিশ মানছে, নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। ফাঁকফোকর-ও রয়েছে বিস্তর। সেই সুযোগ যে আগে দুষ্কৃতীরা নেয়নি, এমন নয়। শহরের প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) অধিগৃহীত কালাচাঁদ মন্দিরে বেশ কয়েক বছর আগে দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল। মন্দিরের গর্ভগৃহের ভিতরে খোঁড়াখুঁড়ি করে মূল্যবান কিছু পুঁতে রাখা আছে কি না দেখতে সন্ধান চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। দেবী মৃণ্ময়ীর মন্দিরে দুষ্কৃতী হানা দিয়েছে আগেও। বিষ্ণুপুরের বেশ কিছু কালীমন্দিরে বিগ্রহের গয়না চুরির ঘটনা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছিল। ফলে মোটেই স্বস্তিতে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই, দাবি শহরবাসীর।

বিষ্ণুপুর শহরজুড়ে মোট ১৯টি প্রাচীন মন্দির, সৌধ ও স্মারক এএসআই-এর সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আরও কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। সবগুলিই মল্লরাজাদের তৈরি। এর মধ্যে অনেক মন্দিরেই রয়েছে রাধাকৃষ্ণের প্রাচীন বিগ্রহ। এএসআই-এর সংরক্ষণের আওতায় থাকা মন্দিরগুলিতে রক্ষী থাকলেও বাকি মন্দিরে সে সব নেই। সর্বোপরি কোনও মন্দিরেই আলো জ্বলে না। অল্প কিছু মন্দিরে রাস্তার আলো একটু এসে পড়ে। ফলে অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়লে, ঠাহর করা কঠিন।

সেই আশঙ্কা ধরা পড়েছে বিষ্ণুপুরের পুরাতত্ত্ব গবেষক তথা আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবনের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তের কথাতেও। তিনি বলেন, “মন্দিরের নিরাপত্তার সঙ্গে আলোর ব্যবস্থা জরুরি। মন্দির থেকে গয়না যদি চুরি যেতে পারে, তাহলে প্রাচীন বিগ্রহের নিরাপত্তা কোথায়? বিষ্ণুপুরের সম্মান ধরে রাখতে হলে মন্দিরগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে আমার মত। আর্থিক মূল্য যাই হোক, মন্দির ও বিগ্রহের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিমেয়।”

পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, মন্দিরগুলিতে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তা ছাড়া, রাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ওই সব এলাকায় টহলও বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তায় একগুচ্ছ প্রস্তাবও দিয়েছে। প্রথমত, মন্দিরের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। দ্বিতীয়ত, মন্দিরের দরজা যতটা সম্ভব পাকাপোক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, কোন মন্দিরে কী কী মূল্যবান জিনিস রয়েছে, সেই তালিকা পুলিশের কাছে জমা করতে হবে। মৃণ্ময়ী মন্দিরে চুরির পরে এই প্রস্তাব দিলেও কোনও মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর নেই।

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক দিক থেকে সমৃদ্ধ বিষ্ণুপুরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগত বা সংরক্ষিত মন্দিরে কী আছে, কী নেই, সব কিছুই নথিভুক্ত থাকা প্রয়োজন।’’

যদিও বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর দাবি করেছেন, ‘‘প্রশাসন মৃণ্ময়ী মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাবে বলেছিল। কিন্তু বসায়নি। পুজোর পরে আমরাই তা বসাব।’’ তবে বিষ্ণুপুর থানার আইসি শান্তনু মুখোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘রাজবাড়িকেই মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে বলা হয়েছিল। মন্দিরের বাঁ দিকে (সাততালা পুকুর) প্রাচীর গিয়ে ঘিরতে বলা হয়েছিল। কিছুই হয়নি। আমরা সেখানে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করেছি।’’

পুলিশ ও প্রশাসন জানাচ্ছে, মন্দিরগুলির নিরাপত্তা নিয়ে পুজোর আগেই একটি বৈঠক করার ভাবনা তাদের রয়েছে। সংরক্ষিত মন্দিরগুলির নিরাপত্তার খোঁজ নিতে এএসআই-এর সঙ্গেও কথা বলা হবে। অসংরক্ষিত মন্দিরগুলির যেখানে বিগ্রহ আছে, তার নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে প্রশাসন।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘শহরের পথে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেগুলি বসে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক সুবিধা হবে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতেও কাজে দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Temple Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy