মল্লারপুরের সভামঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে নিজস্বী। রবিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি না পেয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিজেপির পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুললেন বিজেপির কর্মিসভায় উপস্থিত এক মহিলা। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা না পাওয়ার ক্ষেত্রে জনসাধারণের যে অসুবিধে হচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।
রবিবার মল্লারপুরে নিমিতলার মাঠে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার পঞ্চায়েত কার্যকর্তা সম্মেলন মিঠুন চক্রবর্তীর কাছে ওই অভিযোগ জানান উপস্থিত এক মহিলা। রিনা প্রামাণিক লোহার নামে মল্লারপুরের বাসিন্দা ওই বিধবা বলেন, ‘‘বাইশ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছি। বাড়ি পাইনি।’’ মিঠুন বলেন, ‘‘আপনার বাড়ি না পাওয়ার জন্য রাজ্যে যারা শাসক দল আছে তারা দায়ী জানবেন। তবে এ বার রাজ্যে ১১ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী টাকা পাঠিয়েছেন। আপনার বাড়ি না পাওয়ার দিন এ বার শেষ হবে।’’
মিঠুনকে নিজের সমস্যার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মহিলা। মিঠুন তাঁকে কাঁদতে মানা করেন। মঞ্চে থাকা মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তনুশ্রী লেট ও দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডলকে মহিলার বাড়ি না পাওয়ার বিষয়টি দেখতে বলেন।
বিজেপি পরিচালিত জেলার একমাত্র পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভের প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রাজ্যের বরাদ্দ টাকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে বারবার আবেদন জনিয়ে এসেছি। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ক্ষুদ্রতম স্বার্থে রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আজকে মল্লারপুরে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতে কেন্দ্র প্রকল্পের টাকা না পাওয়ার জন্য মানুষের যে অসুবিধা হচ্ছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।’’
মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমীর লোহার বলেন, ‘‘ওই ভদ্রমহিলার বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তালিকায় প্রথম দিকে নাম ছিল না। বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গাও ছিল না। এখন জায়গা হয়েছে বাড়ি নির্মাণের আবাস প্লাস তালিকায় নামও আছে। ওই মহিলার বাড়ি দ্রুত নির্মাণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ দিন মিঠুনকে দেখার জন্য দশ হাজারের বেশি লোকের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সমাবেশের রূপ নেয় কর্মিসভা। মিঠুন চক্রবর্তী সভাস্থলে দুপুর তিনটের পরে আসেন। তার আগে সভাস্থলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় নেত্রী ভারতী ঘোষ, রাজ্যের সহ সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জেলার একমাত্র বিধায়ক অনুপ সাহা-সহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। মিঠুন চক্রবর্তী প্রায় কুড়ি মিনিট বক্তব্য রাখেন। মিঠুনের বক্তব্যের অধিকাংশ সময় সমাবেশে উপস্থিত পাঁচ-ছ’জনের প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল।
প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে মিঠুন বলেন, ‘‘আমি শুনলাম এখানে কে নাকি বলে গিয়েছে সবাই চলে গিয়েছে বাঁদরগুলো দৌড়চ্ছে। যিনি বলে গিয়েছেন তাকে বলছি মানুষদের এ ভাবে অপমান করবেন না। একটা কথা মনে রাখবেন রাবণের লঙ্কাকে জ্বালিয়েছিল। তাই বাঘ বলছেন বলুন। কিন্তু মানুষদের বানর বলে অপমান করবেন না।’’
দলের কর্মীদের মিঠুন বলেন, ‘‘আমি আপনাদের পরিষ্কার বলছি সব মোদিজী করবেন, অমিত শাহজী করবেন, নাড্ডাজী করবেন, আমাদের সভাপতিরা করবেন তা করলে চলবে না। আপনারা এ বার দায়িত্ব নিয়ে বলুন যে এখানকার ১৬টা পঞ্চায়েত আমাকে উপহার দেবেন। আর যদি দেন তাহলে আবার আমি আসব। তখন আমার ডায়লগ হবে, নাচ হবে। কথা দিয়ে দিচ্ছি।’’
এ দিনের সভায় মল্লারপুরের রাস্তায় বালি, পাথর ভর্তি গাড়ি যাতায়াতে স্কুল ছাত্রদের যাতায়াতের অসুবিধা নিয়ে মিঠুনের কাছে অভিযোগ করেন মল্লারপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র। মিঠুন ওই ছাত্রকে রাস্তা অবরোধের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে এ দিন সভাস্থল থেকেই এক দুঃস্থ ছাত্রীর পড়ার খরচের দায়িত্ব নেন মিঠুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy