Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বুঝতেই দেরি, মৃত্যু

দাদু সুধীর বাউড়ি জানান, শুক্রবার রাতে ক্লাবে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগাছা করে রাত প্রায় ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিল সুমন। ওই কিশোরের মা ইটভাটার দিনমজুর।

কালাচ। ফাইল চিত্র

কালাচ। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

গভীর রাতে পেটে ব্যথার চোটে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। শনিবার সকালে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের পথে মৃত্যু হল রাধানগরের মণিপুর গ্রামের সতেরো বছরের কিশোর সুমন বাউড়ির। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা জানান, খুব সম্ভবত সাপে কেটেছিল সুমনকে। সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনতে আনতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছিল। আর যে পথে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটা মোটে ৪ কিলোমিটার। কিন্তু একেবারে ভাঙাচোরা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ঝাঁকুনিতে।

দাদু সুধীর বাউড়ি জানান, শুক্রবার রাতে ক্লাবে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগাছা করে রাত প্রায় ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিল সুমন। ওই কিশোরের মা ইটভাটার দিনমজুর। বাবার মানসিক ভারসাম্যের অভাব রয়েছে বলে পরিজনেরা জানিয়েছেন। বাড়িটি ছিটে-বেড়া আর মাটির। খড়ের চাল। ভিতরে ইঁদুরের গর্ত রয়েছে ইতস্তত। সুধীরবাবু জানান, মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুয়েছিল সুমন। মশারি টাঙায়নি। রাত তখন আড়াইটা নাগাদ পেটে ব্যথার কথা জানায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করতে করতেই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক কেটে যায়। সাড়ে চারটে নাগাদ ইঞ্জিন ভ্যানে চাপিয়ে যখন রাধানগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, সুমন ততক্ষণে ঝিমিয়ে পড়েছে। লক্ষণ দেখে সাপে কাটার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রেফার করা হয়েছিল বিষ্ণুপুর হাসপাতালে।

জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সুমনের মৃত্যুতে উঠছে নানা প্রশ্ন। মণিপুর গ্রামের ওই বসতিগুলি ধানখেতের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রায় সমস্ত বাড়িই ছিটে-বেড়ার। ধান খেতে আসে ইঁদুর। আর ইঁদুর ধরতে সাপ। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত জানান, মশারি টাঙানো ও অন্য নানা ব্যাপারে সচেতন করতে দ্রুত ওই এলাকায় শিবির করা হবে।

রাধানগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে অ্যান্টি ভেনাম রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। মণিপুর গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক ক্ষেত্রপাল, বুধন বাউড়িরা বলেন, ‘‘এক দিকে পুকুর, এক দিকে ধানজমি। এ রকম একটা জায়গায় সাপখোপ, কীটপতঙ্গ থাকবেই। গ্রামে প্রায় ৫৫টি পরিবারের বাস। বেহাল রাস্তা তো প্রাণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।’’

বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবনাথ বাউড়ি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ থেকে রাস্তাটি সংস্কার করার কথা। টাকা এলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, সুমনের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Common Krait Bishnupur Silent Killer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE