Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Collector

সংগ্রহের পুরাতত্ত্ব সামগ্রী দান বিশ্ববিদ্যালয়কে

আজীবন তিল তিল করে সংগ্রহ করা তাঁর ভান্ডারে মজুত হয়েছিল শতাধিক দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিট। প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রহও চমকপ্রদ।

 বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দুর্গাদাস মণ্ডল (বাঁ দিক থেকে)। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দুর্গাদাস মণ্ডল (বাঁ দিক থেকে)। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত 
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৩:২৪
Share: Save:

বিরাশি বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার মনোহর গ্রামের পুরাতত্ত্ব সংগ্রাহক দুর্গাদাস মণ্ডলের মনে হয়েছিল, তাঁর এত ঐতিহাসিক মূল্যবান দলিল রক্ষা করবে কে? শিল্পী উৎপল চক্রবর্তী বেলিয়াতোড়ে তাঁর তৈরি করা সংস্থা ‘অভিব্যক্তি’ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই পথেই এগোলেন দুর্গাদাসবাবুও। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর সমস্ত সংগ্রহ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে তুলে দিলেন দুর্গাদাসবাবু। তার পরে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলে এই ঐতিহাসিক সামগ্রী কখনও না কখনও কারও না কারও কাজে লাগবেই। সেখানেই এই কষ্টের সংগ্রহের সার্থকতা থাকবে।’’

দুর্গাদাসবাবু জানান, পুরনো জিনিস সংগ্রহ নেশা তাঁর ছোট থেকেই। প্রথমে হরেক রকমের দেশলাই খাপ, সিগারেটের খাপ দিয়ে শুরু। তার পরে ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট, মুদ্রা, বই প্রভৃতি সংগ্রহ করায় মেতে ওঠেন তিনি। আজীবন তিল তিল করে সংগ্রহ করা তাঁর ভান্ডারে মজুত হয়েছিল শতাধিক দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিট। প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রহও চমকপ্রদ। সেখানে রয়েছে গুপ্ত যুগ, চোল, তুর্কি, মোগল, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, করদ রাজ্য মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক মুদ্রা। প্রাচীন চিঠিপত্রের সম্ভার, বইয়ের সংগ্রহ-ও কম নয়। আছে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত বহু গীতা।

এ ছাড়া, দুর্গাদাসবাবুর সংগ্রহের বিষয় হল— বিভিন্ন উক্তি ও কবিতা। শুধু সংগ্রহই করেন না, দিলখোলা এই মানুষটির মন্ত্র— ‘‘বিলিয়েই আনন্দ’’। আশপাশের এলাকার লাইব্রেরি স্থাপনের সময়ে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন তাঁর সংগ্রহ থেকে শত-শত বই। গবেষকরাও রীতিমত সাহায্য পান তাঁর কাছ থেকে।

দুর্গাদাসবাবু জানান, ১৯৬৩ সালে প্রাথমিক স্কুলের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র ৭৫টাকা বেতনে। কিন্তু কম রোজগারেও শখ ছাড়েননি। স্ত্রী অশোকলতাও স্বামীকে সাহায্য করেছিলেন আমৃত্যু। অভাবের সংসারেও স্বামীর কয়েনের সংগ্রহের জন্য অম্লান বদনে নিজের হার খুলে দিয়েছিলেন। এ দিন নিজের আজীবনের সংগ্রহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দিয়ে দুর্গাদাসবাবু বলেন, ‘‘মেয়েকে ভাল ঘরে বিয়ে দিলে বাবার যেমন আনন্দ হয়, আজ আমার সেই রকম অনুভূতি হচ্ছে।’’

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্গাদাসবাবুর কাছে আমরা অসীম কৃতজ্ঞ। কিছু দিন আগে তিনি তাঁর সব সংগ্রহ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পুথি সংগ্রহশালা রয়েছে। একটি পুরাতত্ত্ব সংগ্রহশালা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Collector Antique Bankura University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE