Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

শ্যাম-তুষার দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ

শ্যামবাবুর ঘনিষ্ঠ, তৃণমূলের আমড্যাংরা অঞ্চল সহ-সভাপতি নিতাই চক্রবর্তী হামলার জন্য বিধায়ক-গোষ্ঠীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিধায়ক অবশ্য থানায় অভিযোগ করেননি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

বিধায়ক ও প্রাক্তন বিধায়কের দ্বন্দ্বে ফের অশান্ত তালড্যাংরা থানার আমড্যাংরা গ্রাম। তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের মিছিল থেকে তৃণমূলেরই কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠল। বিধায়ক-গোষ্ঠীর পাল্টা দাবি, তাঁর মিছিলের উপরে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে মারধর করেছে প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীরা।

সোমবার সকালের ওই ঘটনায় তুষার-শ্যাম দ্বন্দ্ব আরও কাছাখোলা হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

শ্যামবাবুর ঘনিষ্ঠ, তৃণমূলের আমড্যাংরা অঞ্চল সহ-সভাপতি নিতাই চক্রবর্তী হামলার জন্য বিধায়ক-গোষ্ঠীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিধায়ক অবশ্য থানায় অভিযোগ করেননি। তৃণমূল সূত্রের খবর, ঘটনার কথা জেনে ক্ষুব্ধ যুব তৃণমূল সভাপতি, দলের তরফে বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের মতো করে পদক্ষেপ করবে। দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। দলীয় ভাবে ঘটনাটি দেখার জন্য দলের বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সব খতিয়ে দেখছি।’’

গত বছর ২১ জুলাই, ‘শহিদ দিবসের’ মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তুষারবাবু। বিষ্ণুপুরে তাঁর কাছেই হার মানতে হয়েছিল শ্যামবাবুকে। সেই থেকেই বিধায়ক এবং প্রাক্তন বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছে। আমড্যাংরা আগেও তপ্ত হয়েছে দু’পক্ষের লড়াইয়ে। এ দিনের ঘটনাও সেই দ্বন্দ্বেরই পরিণাম বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা।

আমড্যাংরা অঞ্চলটি তালড্যাংরা থানার অধীনে হলেও সেটি বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এ দিন সকালে স্থানীয় শালতোড়া গ্রাম থেকে মোটরবাইক মিছিল করছিলেন তুষারবাবুর অনুগামীরা। বেশির ভাগ বাইকেই তৃণমূলের দলীয় পতাকা লাগানো ছিল। গাড়িতে বিধায়ক ছিলেন সামনে।

তৃণমূলের আমড্যাংরা অঞ্চল সভাপতি প্রসাদ কোলের অভিযোগ, ওই মিছিল থেকেই দলের অঞ্চল কার্যালয়ে হামলা হয়। বিধায়ক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাতে নেতৃত্ব দেন। চেয়ার-টেবিল-টিভি-আলমারি ভাঙা হয়। প্রসাদবাবুর দাবি, এ দিনের হামলায় দু’জন কর্মী গুরুতর আহত অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি। বিধায়কের পাল্টা দাবি, আমড্যাংরা অঞ্চল অফিসের সামনে মিছিল পৌঁছতেই ভিতর থেকে এক দল লোক বেরিয়ে এসে মিছিলের কিছু মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিছিলে থাকা তৃণমূল কর্মীদের মারধর করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আমড্যাংরাতেই মিছিল শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে সমস্ত মোটরবাইক সেখানে পোঁছে যায়। সঙ্গীদের উপরে হামলা হতে দেখে অন্যেরা অঞ্চল অফিসে ঢুকে পাল্টা মারধর করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তুষারবাবুর আরও অভিযোগ, পরে শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীরা ঢ্যামনামারা গ্রামে তাঁর অনুগামীদের বাড়িতেও হামলা চালায়। যা শুনে শ্যামবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিধায়ক নিজেই অভিযুক্ত। পিঠ বাঁচাতে এখন গল্প ফাঁদছেন!’’

এ দিনের কর্মূচির কথা তালড্যাংরা থানায় আগে থেকে জানিয়ে রেখেছিলেন বিধায়ক। কিন্তু, পুলিশ অনুমতি দেয়নি। বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘সরকার পক্ষের বিধায়ক হয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। পুলিশ নীরব দেখে মনে করেছি, মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।’’ তাঁর অভিযোগ, এ দিন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দিলেও পুলিশ এসে পৌঁছয় প্রায় এক ঘণ্টা পরে।

তবে পুলিশের দাবি, তালড্যাংরা ফাঁড়ির কাছেই ঘটনাটি ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকর্মীরা সেখানে পৌঁছেছিলেন। তুষারবাবু নিজেকে সরকার পক্ষের বিধায়ক বলে দাবি করলেও শ্যামবাবু বলছেন, ‘‘উনি এ দিনও সিপিএমের লোকজন নিয়ে ঘুরেছেন। তৃণমূলের কর্মসূচি কি সিপিএমের লোক করবে?’’

জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘটনা প্রসঙ্গে কটাক্ষ, ‘‘তুষারবাবুর বয়স হয়েছে। তাই ওঁর মাঝেমাঝে স্মৃতিভ্রংশ হচ্ছে। কখনও বলছেন কংগ্রেসের বিধায়ক, কখনও বলছেন তৃণমূলের। আজকাল ওঁর কথা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy