কেয়া কিন্নর। ফাইল চিত্র
প্রায় আড়াই বছর আগে বীরভূমের লাভপুর থেকে কেয়া কিন্নর নামে এক বৃহন্নলাকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল বিপক্ষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ওই ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে সিআইডি। এবং জানা গিয়েছে, অপহরণের পরে কেয়াকে খুন করা হয়েছিল। সিআইডি-র দাবি, বোলপুর শহরের দখল কাদের হাতে থাকবে, এই নিয়ে হুগলির চুঁচুড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কেয়া-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরেই ওই খুন।
এত দিন পর্যন্ত অপহরণের ঘটনা হিসাবে মামলাটি চলছিল। সিআইডি-র দাবি, সম্প্রতি দিল্লি থেকে ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আয়েশা খাতুন ওরফে নোলক কিন্নর ধরা পরার পরেই জানা যায় এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে কেয়া কিন্নরকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। নোলককে দিল্লি থেকে এনে বোলপুর আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিআইডি। সিআইডি-র দাবি, জেরার মুখে তাদের কাছে নোলক কবুল করেছে, অপহরণের পরে কেয়ার উপরে অত্যাচার চালিয়ে তাঁকে খুন করে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত রোডের ধারে ফেলে দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে দেখেন, স্থানীয় থানা এলাকায় ওই সময় ওই জায়গায় একটি অজ্ঞাতপরিচয় দেহ মিলেছিল। সেটির ময়নাতদন্তও হয়েছিল।
বোলপুর আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ফিরোজ কুমার পাল জানিয়েছেন, পুলিশি হেফাজত থেকে গত ২ ডিসেম্বর নোলক কিন্নরকে বোলপুর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন। নোলকের বিরুদ্ধে যুক্ত হয়েছে খুনের ৩০২ ধারা। এ ছাড়াও, তার কাছে এ দেশের নাগরিক হওয়ার কোনও প্রমাণপত্র না মেলায় তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট ধারাতেও মামলা হয়েছে।
কোন পথে কিনারা
২০১৭ সালের ১৭ মার্চ লাভপুর থেকে অপহৃত হন কেয়া কিন্নর। একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, বৃহন্নলাদের চুঁচুড়ার একটি গোষ্ঠীর সদস্যেরা বেধড়ক মারধর করছে। তার পর থেকে হদিস মেলেনি কেয়ার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু সিআইডির দিল্লি থেকে নোলক কিন্নরকে ধরে অপরাধের কিনারা হল সম্প্রতি
সিআইডি ও বৃহন্নলাদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ কাটোয়া থেকে লাভপুর থানা এলাকার দরবারপুর গ্রামে একটি বিয়েতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন কেয়া কিন্নর। সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করা হয়। ওই দিন বিকেলেই কেয়া-গোষ্ঠীর এক সদস্য অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিয়ো পান। তাতে দেখা যায়, বৃহন্নলাদের চুঁচুড়ার একটি গোষ্ঠীর সদস্যেরা খাগড়াজোলে তাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে কেয়াকে বেধড়ক মারধর করছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির ছিল চুঁচুড়া গোষ্ঠীর তিন বৃহন্নলা ‘সুইটি’, ‘নোলক’ ও ‘আবু মাওবাদী’র দিকে।
কেয়া-গোষ্ঠীর অভিযোগ, ভিডিয়োয় সব কিছু স্পষ্ট দেখার পরেই তারা হুগলির পুলিশ সুপার এবং চুঁচুড়া থানার আইসি-কে বিষয়টি জানায়। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। পরের দিন (১৮ মার্চ) লাভপুর থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও পুলিশ তা না নিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করে। কেয়াকে উদ্ধার করে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে সরব হয় বৃহন্নলাদের একটি সংগঠন। পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করে তাঁরা ওই বছর এপ্রিলে বিক্ষোভ দেখান।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে লাভপুর থানা, পরে নানুর থানা ঘটনার তদন্তে নামে। কিন্তু, রহস্যের জট খোলেনি। তবে হাল ছাড়েনি কেয়াদের সংগঠন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক বছর আগে ওই মামলা আসে সিআইডি-র কাছে। মামলার তদন্তকারী তথা বীরভূম জেলা সিআইডি-র অফিসার অমরেশ মণ্ডল জানিয়েছেন, মামলা হাতে পাওয়ার পরই সুইটি ও আবু মাওবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু, কেয়ার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, তিনি কোথায়— সেটা জানা যাচ্ছিল না। এই মুহূর্তে সুইটি ও আবু মাওবাদী জামিনে। তাদের জামিন খারিজের আবেদনও করেছে সিআইডি। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘বহু চেষ্টার পরে জানা যায় মূল অভিযুক্ত নোলক কিন্নর দিল্লিতে আছে। সেখানে গিয়েই তাকে আমরা ধরে আনি। তবে ও এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল, বীরভূমে নিয়ে আসতে বেগ পেতে হয়েছে।’’
কেয়া কিন্নরের সংগঠনের পক্ষে পিঙ্কি , সোনাদেবীরা বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও খুনি ধরা পড়েছে, এতেই আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy