Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
suri

নদীতে মরণ, জীবন লেখা-পড়ায়

বাড়ির খুদে সদস্যদের নদীতে নামতে দিতে চান না সিউড়িতে ময়ূরাক্ষী ঘেঁষা অঞ্চলের লোকজন। বদলে, বিকেল নামলেই পাঠিয়ে দেন গ্রামের মন্দিরের চাতালে কিংবা গাছতলায় ‘পড়া-লেখা’র পাঠশালায়।

সিউড়ির ভান্ডীরবনে ‘পড়া-লেখা’র পাঠশালা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সিউড়ির ভান্ডীরবনে ‘পড়া-লেখা’র পাঠশালা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

শান্তনু ঘোষ
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৮
Share: Save:

‘নদীটাকে দেখলে বড্ড কষ্ট হয়!’ এঁকেবেঁকে চলা জলের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। তাঁর মতোই রায়পুর, ভান্ডীরবনের মানুষের স্মৃতিতে আজ, ছেলেবেলার ময়ূরাক্ষী নদী। হাঁটুজল পেরিয়ে বৈদ্যনাথপুরে ক্রিকেট, ভলিবল খেলতে যাওয়া অতীত। চার-পাঁচ বছরে যথেচ্ছ বালি তোলার ফলে নদী আজ, মৃত্যু খাদ!

তাই, বাড়ির খুদে সদস্যদের নদীতে নামতে দিতে চান না সিউড়িতে ময়ূরাক্ষী ঘেঁষা অঞ্চলের লোকজন। বদলে, বিকেল নামলেই পাঠিয়ে দেন গ্রামের মন্দিরের চাতালে কিংবা গাছতলায় ‘পড়া-লেখা’র পাঠশালায়। সেখানেই খুদের দল অভিনয় করে, কবিতা পাঠ করে। নাটক করে, আবার ব্রতচারী অভ্যাস করে। সিউড়ি সদর থেকে খাটঙ্গা রোড ধরে এগোতেই চোখে পড়ছিল রাস্তার ধারে-ধারে স্তূপাকৃতি বালি, দাঁড়িয়ে ডাম্পার। মূল রাস্তা ছেড়ে গ্রামে ঢুকে যাওয়া মেঠো পথের মুখে ঝোলানো বোর্ডে লেখা সেটি কত নম্বর বালি ঘাট। সেখানেই নদী থেকে ওঠে বালি। কয়েক বছর আগে রায়পুরে ময়ূরাক্ষীতে নেমে বালির গর্তে তলিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। নদীর থেকেও বড় আতঙ্ক তাঁদের মুখ খুলতে। এক মধ্য বয়স্কের কথায়, “কী হবে বলে! সবাই সব জানেন।”

এক সময় ভান্ডীরবনের আদিবাসী পরিবারের লোকজন নদী পেরিয়ে উল্টো দিকের চরিচার (প্রচলিত চোরচোর) জঙ্গলে যেতেন শালপাতা সংগ্রহে। থালা, বাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু সে সব এখন অতীত বলে জানিয়ে ভান্ডীরবনের বাসিন্দা এক মহিলা বললেন, “ও নদীতে এখন নামলেই মরণ আছে গো। তাই বাচ্চাগুলিকে আগলে রাখি। যেন ওদিক পানে গেলেও, নদীতে না যায়।”

রায়পুর, ভান্ডীরবনে লিভার ফাউন্ডেশনের ‘পড়া-লেখা’ প্রকল্প চলছে। দেখা গেল, এক মা-শিক্ষিকা বলছেন, ‘এক ফোঁটা বৃষ্টি’। তা শুনেই গোল হয়ে দাঁড়ানো শিশুরা হাতের তালুতে একটি আঙুল ঠুকে আওয়াজ তুলছে। দু’ফোঁটা বললেই, দু’টি আঙুলের শব্দ। আর ঝমঝম শব্দ তুলছে হাততালি দিয়ে। আবার নেতাজি বললেই, সকলে স্যালুট করছে। গাঁধীজি বললেই, একটু ঝুঁকে লাঠি হাতের ভঙ্গিমা। ভুল করলে বসে পড়তে হচ্ছে। কত জন বাদ গেল, তা গুণতে হচ্ছে অন্যদের।

নগরী পঞ্চায়েতের করমশাল গ্রামেও জল-ডিঙি খেলায় ব্যস্ত খুদেরা। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের সন্তানদেরও সেই পাঠশালায় এনেছেন মা-শিক্ষিকারা। লিভার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “নদীতে দাপাদাপি এখন অতীত। তাই এই খেলার ছলেই বাচ্চাদের বোধ ও শরীরের বিকাশের প্রয়াস।” সূর্য তখন অস্ত যাওয়ার মুখে। বয়স্কদের স্মৃতিতে ফুটে উঠছে ময়ূরাক্ষী নদীর চরে বালিকা বধূ সিনেমার ‘বড়ে আচ্ছে লগতে হ্যায়ঁ, এ ধরতি, এ নদীয়া...’ গানের শ্যুটিংয়ের দৃশ্য। আর, আগামীর প্রজন্ম সুর করে অভিনয়ে পাঠ করছে, ‘আমার টিচারও লাঠি আনে। তবে পেটাতে নয় গো, ছবি দেখাতে...’

অন্য বিষয়গুলি:

suri Mayurakshi River raipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy