পোড়া: ভাটা থেেক বের করে আনা মাটির বাসন গোছাচ্ছে এক শিশু। বান্দোয়ানে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
শিশু শ্রমিকদের স্কুলমুখী করতে তাদের মাসে চারশো টাকা করে ভাতা দেওয়া চালু রয়েছে। কিন্তু নিয়ম থাকলেও নানা জটিলতায় পুরুলিয়া জেলার অনেকেই সেই ভাতা পাচ্ছে না। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় ভাতা না পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা হাজার ছয়েক। বকেয়া ভাতার পরিমাণ তিন কোটির কাছাকাছি। বাঁকুড়াতেও কয়েকজনের একই সমস্যা। শিশু দিবসের দিন, বৃহস্পতিবার খোঁজ করতে গিয়ে এমনই তথ্য মিলেছে।
পারিবারিক দারিদ্রের কারণে শিশুদের কাজে নামিয়ে দেওয়া হয়। শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কাজ থেকে ছাড়িয়ে ওই শিশু শ্রমিকের স্কুলে ভর্তি করানো হবে। সে জন্য তাদের ভাতা দেওয়া চালু করা হয়। কিন্তু ভাতা বন্ধ হওয়ায় সেই শিশু শ্রমিকদের স্কুলে ধরে রাখার সমস্যা হচ্ছে। পুরুলিয়া জেলায় জেলায় শিশু শ্রমিকদের স্কুল তথা স্পেশ্যাল ট্রেনিং সেন্টারের সংখ্যা বর্তমানে ৮৯টি। স্কুলের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি বলরামপুর, বরাবাজার, জয়পুর, আড়শা, পাড়া, কাশীপুর প্রভৃতি ব্লকে। এই স্কুলগুলি পরিচালনা করে ‘ডিস্ট্রিক্ট ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রোজেক্ট’ বা জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্প। এই সংস্থার মাথায় আছেন জেলাশাসক। এ ছাড়া, শ্রম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা আছেন এই সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটিতে।
সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের ভাতা ঢোকার কথা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তা নিয়ে কয়েকজনের জটিলতা রয়েছে। তার উপরে এই জেলায় কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের কাছ থেকে অর্থ না আসায় ভাতা দেওয়া ধাক্কা খাচ্ছে। বারবার কেন্দ্রের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের কাছে পড়ুয়াদের বকেয়া ভাতা দেওয়ার জন্য আবেদন জানালেও ফল হয়নি বলে অভিযোগ।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ না করাতেই শিশু শ্রমিক পড়ুয়াদের ভাতা দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অর্থ পাওয়া গেলেই ভাতা দেওয়া হবে।”
শিশু শ্রমিকদের অনেকেরই প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় তাদের জন্য ‘স্পেশাল ট্রেনিং সেন্টার’ খোলে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিটি স্কুলে দু’জন শিক্ষক থাকার কথা। তাঁদের সাম্মানিক দেওয়া হয়। এ ছাড়া, রয়েছেন এক জন করে করণিক ও এক জন পিওন।
সূত্রের খবর, প্রায় তিন বছর ধরে ভাতা দেওয়া নিয়ে সমস্যা চলছে। তাতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মধ্যে। তেমনই কয়েকজনের বক্তব্য, ‘‘গরিব বলেই তো ছেলেমেয়েদের দু’টো রোজগারের জন্য কম বয়সে খাটতে পাঠানো হয়েছিল। সরকার থেকে পড়ানোর পাশাপাশি, মাসে টাকা দেওয়ায় কাজ থেকে ছাড়াতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু সেই টাকা না পাওয়া গেলে লাভ কী?’’
কিন্ত কেন মিলছে না ভাতা? প্রশাসন সূত্রের দাবি, নয়াদিল্লি থেকে অর্থ বরাদ্দ না হওয়াই প্রধান সমস্যা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু জটিলতাও। দশ বছরের বেশি বয়স না হলে পড়ুয়ার নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। পুরুলিয়াতে শিশু শ্রমিক পড়ুয়াদের বেশির ভাগেরই বয়স দশ
বছরের নীচে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। তাতেই ভাতার টাকা দেওয়ার
সমস্যা হচ্ছে। বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুর-এলাকায় শিশুদের লটারি বিক্রি করা থেকে হোটেল, চা ও মিষ্টির দোকানে কাজ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া, রানিবাঁধ ও শালতোড়া ব্লক দু’টিতে শিশুদের জ্বালানি ও পাতা সংগ্রহের কাজ করানো হয়। শিশু শ্রমিক প্রকল্পের বাঁকুড়া জেলার প্রোজেক্ট ডিরেক্টর তপন ঘোষাল বলেন, ‘‘এখানে কয়েকজন শিশু শ্রমিক পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তবে বেশির ভাগই ভাতা পাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy