নালিশ: বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রাজকুমার ঘোষ (অভিযোগপত্র হাতে) ও তাঁর ভাই সোমনাথ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
অ্যাম্বুল্যান্স-পরিষেবা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ উঠছে। এ বার সে তালিকাতে যোগ হল বাঁকুড়ার বড়জোড়ার নাম। অভিযোগ, প্রসবযন্ত্রণা শুরু হওয়ায় বারবার সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার ‘টোল ফ্রি’ নম্বরে ফোন করা হলেও সাহায্য মেলেনি। বাড়িতেই প্রসবের পরে, মরিয়া হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রসূতির স্বামী। অভিযোগ, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সগুলিও এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে নিয়ে আসতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত থানায় গেলে পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দেয়।
ঘটনাটি নিয়ে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন প্রসূতির স্বামী রাজকুমার ঘোষ। বড়জোড়ার ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাজকুমারবাবুর বলেন, ‘‘এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা যেন কারও না হয়। দরকারে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই সংস্থা নিজেদের কর্তব্য এড়িয়ে গিয়েছে। তাই আমার স্ত্রীকে বাড়িতে প্রসব করতে হল।”
বড়জোড়ার বিজেপি নেতা সোমনাথ কর বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করল, স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে কেবল কাগজে-কলমে।’’ বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ১০২ নম্বরের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের কথা স্বাস্থ্য দফতরে জানাব। যে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা ওই সদ্য প্রসূতি ও তাঁর সন্তানকে বাড়ি থেকে আনতে রাজি হননি, তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার এস এন প্রসাদ বলেন, “কিছু অ্যাম্বুল্যান্স করোনা রোগীদের পরিষেবা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই পরিষেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠব।” সিএমওএইচ (বাঁকুড়া) শ্যামল সরেন বলেন, “ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।”
রাজকুমারবাবু জানান, সোমবার ভোর ৪টে নাগাদ তাঁর স্ত্রী রিঙ্কুদেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন থেকে বারবার ১০২ ‘টোল ফ্রি’ নম্বরে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ফোন করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “কখনও বলা হয় আধ ঘণ্টা পরে ফোন করতে। কখনও জানানো হয়, কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। এ দিকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বাড়িতেই স্ত্রীর প্রসব হয়ে যায়।”
রাজকুমারবাবু জানান, প্রসবের পরে, অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজে সরাসরি বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যেককে অনুরোধ করি, আমার স্ত্রী ও সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য করতে। কিন্তু কেউই যেতে রাজি হল না। সবার একটাই দাবি, বুকিং রয়েছে।” এর পরেই তিনি বড়জোড়া থানায় যান। সেখানে পুলিশকর্মীরা ফোন করে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দেন।
১০২ নম্বরের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার বাঁকুড়ার ইনচার্জ বামদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আমাদের মোট দু’টি গাড়ি চলে। তার মধ্যে একটি গাড়ি করোনা-আক্রান্ত রোগীদের পরিষেবা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যটি নিশ্চয়ই পরিষেবা দিতে ব্যস্ত ছিল বলেই সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
রাজকুমারবাবু বলেন, “স্ত্রী ও সন্তান— দু’জনেই ভাল আছে। কিন্তু আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, সরকারি ভাবে নানা প্রকল্প চালু থাকলেও সাধারণ মানুষ সে সুবিধা না-ও পেতে পারেন।” তাঁর ভাই সৌমেন ঘোষ বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ায় অঘটন ঘটলে, তার দায় কে নিত?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy