পুরুলিয়া শহরে। নিজস্ব চিত্র।
বাজি ফেটেছে। তবে তা মাত্রা ছাড়ায়নি। কালীপুজোর রাতে, পুরুলিয়া জেলা জুড়ে এমনই ছিল ছবিটা। জেলা সদর পুরুলিয়া শহর-সহ তিন মহকুমা রঘুনাথপুর, মানবাজার, ঝালদার বেশির ভাগ বাসিন্দা জানাচ্ছেন, শব্দদূষণের নিরিখে এ বারের দীপাবলি ছিল অন্য বছরগুলির তুলনায় অনেকটাই আলাদা।
পুজোর আগে, সব ধরনের বাজিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পরে, সুপ্রিম কোর্ট ‘পরিবেশবান্ধব’ বাজিতে ছাড় দিলেও টানাপড়েনে বাজি ব্যবসাই এ বারে জমতে পারেনি, মানছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাদের বড় অংশও।
শেষ লগ্নে বাজি বিক্রি শুরু হলেও ‘নিষিদ্ধ’ বাজি বিক্রি বন্ধে তৎপর ছিল জেলার সব থানাই। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “বাজারগুলিতে ‘নিষিদ্ধ’ বাজি বিক্রি বন্ধে নিয়মিত অভিযান হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীরা নজরদারি চালিয়েছেন। ঝাড়খণ্ড থেকে যাতে ‘নিষিদ্ধ’ বাজি পুরুলিয়ার বিভিন্ন বাজারে ঢুকে না পড়ে, তার জন্য সীমানায় নাকা তল্লাশি চলেছে।” এর পাশাপাশি, পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, আদ্রা, নিতুড়িয়া, পাড়া, সাঁতুড়ি থানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল ‘নিষিদ্ধ’ বাজি আটক করার সঙ্গে সেগুলি বিক্রির অভিযোগে বেশ কিছু বিক্রেতাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
আর এ সবের ফলেই দীপাবলির রাত কার্যত নিরুপদ্রব কেটেছে বলে দাবি। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় রাতের দিকে শব্দবাজি ফাটার আওয়াজ পাওয়া গেলেও তার তীব্রতা বিশেষ ছিল না। আদ্রার বাসিন্দা তপন কর, পুরুলিয়ার বাসিন্দা শাশ্বতী কুণ্ডুরা বলছেন, “এ বারে বাজি ফাটলেও শব্দবাজির দাপট ছিল খুবই কম। মানবাজারের বাসিন্দা শঙ্কর দত্ত, ঝালদার অমর রায়, রঘুনাথপুরের অভিষেক মিশ্রদেরও অভিজ্ঞতা, আগে যেমন বিকেল থেকেই শব্দবাজির দাপট শুরু হয়ে যেত, এ বারে তা প্রায় ছিলই না। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, কালীপুজোর রাতে ‘নিষিদ্ধ’ বাজি ফাটানোর কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি থানাগুলিতে।
পুরুলিয়া শহর, ঝালদা, রঘুনাথপুর, আদ্রার নানা এলাকায় মূলত আতশবাজিই পোড়ানো হয়েছে। অতীতে বাজি পোড়ানোর যেমন নজির রয়েছে, রাশ পড়েছে তাতেও। কারণ হিসাবে অধিকাংশ বাজির ‘আকাশছোঁয়া’ দামের কথা বলছেন। তুবড়ি বা চরকির মতো বাজির দাম গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে, বলছেন অনেকেই।
বাজি পোড়ানো কমার পেছনে সচেতনতা বৃদ্ধির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মত পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “আদালত শুধু ‘পরিবেশবান্ধব’ বাজি পোড়াতে নির্দেশ দিয়েছিল। পুলিশও ‘নিষিদ্ধ’ বাজি বিক্রি বন্ধে তৎপর ছিল। তবে মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই বাজি ফাটানোয় অনেকটাই রাশ পড়েছিল।”
পুরুলিয়ার পুর-প্রশাসক নবেন্দু মাহালিও জানান, পুজোর আগে কমিটিগুলিকে ডেকে নিয়ম-নীতি মেনে পুজো করার পাশাপাশি, ‘নিষিদ্ধ’ বাজি ফাটানো বন্ধে সচেতনতার প্রচারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কমিটিগুলিও সচেতনতার পরিচয় দিয়ে বাজি পোড়ায়নি।”
এ দিকে, বাঁকুড়ার বিভিন্ন প্রান্তে বাজি পোড়ানোর প্রবণতা কমলেও বিষ্ণুপুর শহরের ছবিটা ছিল ভিন্ন। পুলিশের অভিযানে সে ভাবে কেনাবেচা হয়নি ‘নিষিদ্ধ’ বাজির। তবে দীপাবলির রাতে আতশবাজির সঙ্গে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে ফেটেছে শব্দবাজিও, দাবি স্থানীয়দের একাংশের। বিষ্ণুপুর কাটানধার থেকে স্টেশন রোড, ভগৎ সিং মোড় থেকে গোপালপুর, রঘুনাথসায়র থেকে রসিকগঞ্জ— সর্বত্র কম-বেশি বাজির শব্দ শোনা গিয়েছে। বোলতলার এক প্রবীণের কথায়, “আদালতের নির্দেশে ‘নিষিদ্ধ’ বাজি বন্ধ হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপ করেছে। তবে বাস্তবে একের পরে এক বাজি ফাটার শব্দ কানে এসেছে।” যদিও পুলিশের দাবি, বাজি বন্ধে লাগাতার অভিযান হয়েছে। রাস্তায় পুলিশি টহলও ছিল।
আতশবাজিতেই মন দিয়েছিলেন বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দারা। ইন্দাস, পাত্রসায়রের সঙ্গে দক্ষিণ বাঁকুড়ার নানা এলাকাতেও ছিল কম-বেশি একই ছবি। তবে বাজি পোড়ানোর পরিমাণ ছিল কমই। কারণ হিসেবে অনেকেই বাজির অভাবকে দুষেছেন। ‘নিষিদ্ধ’ বাজি আটকাতে সর্বত্র নজরদারি চলেছে জানিয়ে জেলা পুলিশের দাবি, কালীপুজোর রাতে জেলার কোনও প্রান্ত থেকে ‘নিষিদ্ধ’ বাজি ফাটানোর কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy