Advertisement
E-Paper

মেয়ের বিয়ের টাকায় বৃদ্ধাশ্রমকে টোটো উপহার সিউড়ির ছুতোরমিস্ত্রির! চোখে জল আবাসিকদের

বীরভূমের সিউড়ির শালবনি গ্রামে বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করেছেন সিউড়ির সাইবার ক্রাইম থানায় কর্মরত ছবিলা খাতুন। বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে দায়িত্ব।

Carpenter of Suri donates Toto to old age home

নতুন কেনা টোটোর দুই পাশে ছুতোরমিস্ত্রি নুর আলম মিয়াঁ এবং কনস্টেবল ছবিলা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৩
Share
Save

পেশায় তিনি কাঠমিস্ত্রি। তবে বাড়ির পাশে বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের প্রয়োজনে হাতের করাত-হাতুড়ি ফেলে দৌড় দেন। কারও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে নিয়ে আসা থেকে কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, ছুতোরমিস্ত্রি নুর আলম মিয়াঁ হাজির হন এক ডাকেই। নববর্ষে সেই নুর এক কাণ্ড করলেন। মেয়ের বিয়ের জন্য তিলে তিলে সঞ্চিত টাকা তুলে দান করলেন বৃদ্ধাশ্রমকে। কারণ, বৃদ্ধাশ্রমের জন্য একটা টোটোর বড্ড প্রয়োজন ছিল। নতুন বছরে এমন উপহার পেয়ে খুশিতে চোখে জল অশীতিপর আবাসিকদের। বৃদ্ধাশ্রম চালান যিনি, সেই লেডি কনস্টেবল ছবিলা খাতুনের কথায়, ‘‘এলাকায় ধনবান অনেকে আছেন। কিন্তু এমন মন কেবল নুর ভাইয়েরই আছে।’’

বীরভূমের সিউড়ির শালবনি গ্রামে বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করেছেন সিউড়ির সাইবার ক্রাইম থানায় কর্মরত ছবিলা খাতুন। বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে দায়িত্ব। তাই সদাব্যস্ত ছবিলার প্রয়োজন লোকবলের। যাঁদের বললে অন্তত ছোটখাটো সাহায্যগুলো পাওয়া যাবে। এই কাজে ছবিলার বড় ভরসা ছুতোরমিস্ত্রি নুর। বিপদে-আপদে নুর ছুটে আসেন। রাতবিরেতে কোনও বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবায় হাজির নুর, কাউকে ঝট করে কোথাও নিয়ে যেতে হলেও সেই নুর। এ হেন নুরের সঙ্গে কিছু দিন আগে ছবিলা একটা টোটো কেনার আলোচনা করছিলেন। আসলে বিপদে-আপদে গ্রামের মূল যান তো এখন টোটো। কেউ অসুস্থ হলে টোটো ডাকতে ডাকতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। তার উপর বৃদ্ধাশ্রমের এটা-ওটা আনার প্রয়োজন হলেও টোটোর খুঁজে হন্য হতে হয়। তাই বৃদ্ধাশ্রমের জন্য একটি টোটো কেনা জরুরি মনে হয়েছে ছবিলার। এর-ওর সঙ্গে পরামর্শ করে ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্টও করেন তিনি। কিন্তু লেডি কনস্টেবলের কথায়, ‘‘তাতে ১০ জনও সাড়া দেননি। ইচ্ছা ছিল নতুন বছরে টোটো কিনব। কিন্তু এদিক-ওদিক করে যা টাকা ছিল, তাতে টোটো কেনা আমার পক্ষে অসাধ্য। তখন হঠাৎ এগিয়ে এল নুর ভাই।’’

নুরের কথায়, ‘‘মায়েদের একটা টোটো দরকার। অথচ কেনা হবে না?’’ মেয়ের বিয়ের জন্য লাখ খানেক টাকা জমিয়েছিলেন। সেটাই তিনি তুলে দিয়েছেন ছবিলার হাতে। নতুন বছরের প্রথম দিনে টোটো চলে এসেছে। টোটোর সামনে লেখা, ‘ছবির স্বপ্নপুরী বৃদ্ধাশ্রম।’ তার ঠিক তলায় লেখা, ‘অসহায় মায়েদের জন্য।’ ছুতোরমিস্ত্রি নুরের কথায়, “ভাল কাজের জন্য আমার জমানো টাকা তুলে দিয়েছি।’’ কিন্তু মেয়ের বিয়ে? নুরের জবাব, ‘‘ভবিষ্যতে কী হবে তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। আশ্রমের মায়েদের আশীর্বাদে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক উতরে যাবে।’’ নুরের কাণ্ডে চোখ ভিজে আসে লেডি কনস্টেবলের। তিনি বলেন, “নতুন বছরের শুরুতে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের জন্য টোটো কিনব ভেবেছিলাম। কিন্তু সাড়া দেননি কেউ। শেষের দিকে তো নতুন টোটো কেনার আশাও ছেড়েই দিয়েছিলাম। তখনই আমাদের আশ্রমের কাঠের কাজ করা নুর আমাকে বলল, ‘‘টোটো কেনা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এক লক্ষ টাকা আমি দেব।’’ ছবিলা প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, কতটা কষ্ট করে মেয়ের বিয়ের জন্য ওই টাকা জমাচ্ছেন প্রৌঢ় ছুতোরমিস্ত্রি। কিন্তু নুর নাছোড়। তিনি টোটো কেনার টাকা দেবেনই। শেষমেশ নতুন বছরের প্রথম দিনেই বৃদ্ধাশ্রমের নিজস্ব টোটো চলে এসেছে।

আশ্রমে নিজেদের জন্য নতুন টোটো দেখে আপ্লুত বৃদ্ধা আবাসিকরা। মাসখানেক আগে এক রাতের বেলা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন অন্নপূর্ণা পাল। তখন টোটোর জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে অন্যদের। সেই বৃদ্ধার কথায়, “আমাদের অনেককে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়। এই আশ্রম শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। সব সময় গাড়ি মেলে না। এখন আমাদের নিজস্ব টোটো হল।’’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে বৃদ্ধার। তিনি আবার বলেন, ‘‘আমাদের জন্য নানা কাজ করে চলেছে ছবিলা। আর নুরও আমাদের জন্য যে এত বড় একটা আত্মত্যাগ করল, তাতে ধন্য আমরা। ওর বাল হোক।” নুরের চাওয়া তো এই টুকুই। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাস্, মায়েদের আশীর্বাদ থাকলেই হবে। আমার কোনও চিন্তা নেই।’’

Birbhum donation old age home Suri

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।