ভাঙচুরের পরে ছত্রখান হয়ে রয়েছে আসবাব। নিজস্ব চিত্র
এক তৃণমূল নেত্রীকে নিগ্রহ, তাঁর দু’বছরের মেয়েকে বিছানা থেকে ছুড়ে ফেলা এবং মহিলার আত্মীয়-পড়শিকে মারধরের অভিযোগ উঠল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের বেলুট গ্রামে। অভিযোগ, শিল্পা দাস মুখোপাধ্যায় নামে ওই তৃণমূল নেত্রীর বৃদ্ধা জেঠিমার মাথায় লাঠির বাড়ি মারে ‘হামলাকারীরা’। বাঁচাতে গিয়ে টাঙ্গির কোপে গুরুতর জখম হন এক প্রতিবেশীও। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি দাবি করেছে, তৃণমূলের অন্দরের কোন্দলের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে ধরা হয়েছে। সকলেই বিজেপি কর্মী।
শিল্পাদেবী পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির মহিলা এবং শিশুকল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এক দল লোক দরজা ভেঙে তাঁর বাড়িতে ঢোকে। তাদের হাতে লাঠি, রড এবং টাঙ্গির মতো অস্ত্র ছিল। গালিগালাজ করতে করতে তাকে ‘নিগ্রহ’ করে হামলাকারীরা। খাটে ঘুমিয়ে ছিল তাঁর দু’বছরের শিশুকন্যা। তাকে মেঝেতে ছুড়ে ফেলা হয়। লাঠি দিয়ে বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, কাচের আলমারি, জানলা, দরজা ভাঙতে থাকে তারা।
তিনি অভিযোগ করেন, ওই সময় তাঁর ষাটোর্ধ্ব জেঠিমা কনক মুখোপাধ্যায় ঘরে ঢুকলে তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে মারে দুষ্কৃতীরা। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশী দ্বৈপায়ন চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, হামলাকারীরা তাঁকে টাঙ্গি এবং লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। চলে যাওয়ার আগে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে থাকা নগদ ৩২ হাজার টাকা ও গয়না লুট করে বলে অভিযোগ শিল্পাদেবীর।
ওই কর্মাধ্যক্ষ জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় কনকদেবী এবং দ্বৈপায়নবাবুকে পাত্রসায়র হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বৈপায়নবাবুর আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে শনিবার তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে দাবি করেছেন শিল্পাদেবী।
অভিযোগনামা
বাড়িতে হামলা। ভাঙচুর।
শিশুকে ছুড়ে ফেলা।
মহিলার মাথায় লাঠি।
এক জনকে টাঙ্গির কোপ।
পাত্রসায়রের ব্লক তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম সিংহের অভিযোগ, এক বিজেপি নেতার নেতৃত্বে ওই আক্রমণ হয়েছে। কয়েকমাস আগে তৃণমূলের অঞ্চল পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। তাঁর দাবি, ‘‘শিল্পাদেবী ও তাঁর ভাসুর অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাত্রসায়রে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তৃণমূল। বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হওয়ার পরে, বহু যুবক এখন তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন। সে রাগ থেকেই এই আক্রমণ।’’ পক্ষান্তরে, বিজেপির পাত্রসায়র ২ মণ্ডলের সভাপতি তমাল গুঁইয়ের দাবি, ‘‘ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। ভাঙচুর বিজেপির সংস্কৃতি নয়। এটা পুরোটাই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘বিজেপি এখন ব্যাকফুটে। মানুষ ওদের বুঝতে পেরেছেন। তাই ওরা আক্রমণ করেছে।’’ তমালবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার বিকেলে এক বিজেপি কর্মীকে তৃণমূলের ছেলেরা অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কর্মীদেরই গ্রেফতার করে। অপরাধ করলে আমাদের কর্মীরা কি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতেন?’’ প্রশাসন ও পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন ওই বিজেপি নেতা। যদিও সে অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে।
পাত্রসায়র থানার পুলিশ জানায়, শিল্পাদেবীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুশান্ত ঘোষ, জয়দেব মাঝি এবং পরিতোষ মাঝি নামে তিন সক্রিয় বিজেপি কর্মীকে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার তদন্ত চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy