আশ্রয়: কাঁটায় ঘেরা বাবলা গাছে বসবাস। ইলামবাজারে। নিজস্ব চিত্র
বর্ষা এসেছে কিন্তু বৃষ্টি নেই। বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জলসঙ্কট। সমস্যার শিকড় অবশ্য অনেকটাই গভীরে। অবাধে গাছ কাটা আর প্লাস্টিক দূষণের জেরে গোটা প্রাণীজগৎ বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনে বীরভূমও পিছিয়ে নেই। এর ফলে পাখিদেরও স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হচ্ছে। শ্রীনিকেতন থেকে মহিদাপুর হয়ে ইলামবাজার যাওয়ার রাস্তায় গেলে তার প্রমাণ মেলে। রাস্তার ধারে বা পাশের জমিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাঁটা-ভর্তি বাবলা গাছে একাধিক বাসা বেঁধেছে গোশালিক বা গোবরে শালিক পাখিরা। কদম, গামার গাছেও প্রচুর বাসা তাদের। গ্রামবাসী জানান, এলাকায় পাখির সংখ্যা তো আগের থেকে কমেছেই, গাছ কমে যাওয়ায় ঘর-বাড়ি লাগোয়া গাছেই এখন সব রকম পাখি বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। উঠোনে থাকা কুল গাছ, এমনকি পাতা ঝরে যাওয়া গাছেও বাসা বাঁধতে বাধ্য হচ্ছে পক্ষীকূল। এই পথের নিত্যযাত্রীরা বলেন, ‘‘এই পথের ধারে আগে যখন অন্যান্য গাছ ছিল তখন এ ভাবে বাবলা গাছে পাখির বাসা চোখে পড়েনি। পর্যাপ্ত গাছের অভাবেই কাঁটাযুক্ত এইসব গাছে বাসা বাঁধতে হয়েছে পাখিদের।’’ প্রবীণ বোলপুরবাসীদের কথায়, বোলপুর-লাভপুর রাস্তায় কঙ্কালীতলা যাওয়ার পথে সার দিয়ে বাবলা গাছ আছে। একইভাবে কোপাই যাওয়ার পথে বাবলা গাছ দেখা যায়। পার্শ্ববর্তী বীরকিচা, রাখড়েশ্বর, আড়ার গ্রামগুলিতে রীতিমত বাবলার বন হয়ে আছে। কিন্তু সেই সমস্ত গাছে কোথাও পাখির বাসার দেখা মেলে না। কেননা সেখানে অন্যান্য গাছ আছে।
কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছে মহিদাপুরের এই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। বোলপুর বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার কেশব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অনুমতি নিয়েই ওই এলাকায় প্রায় ১১০টি শিশুগাছ-সহ অন্যান্য কিছু গাছ কাটা হয়েছে।’’ কিন্তু পাখি গবেষকরা মনে করছেন, একসঙ্গে শতাধিক গাছ কাটার ফলেই সমস্যায় পড়েছে ওই এলাকার পাখিরা। পাখি গবেষক সুরপ্রতিম বাশুলির কথায়, ‘‘বাবলা গাছে সাধারণত বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। কেননা তাদের বাসা ভঙ্গুর নয় আবার জলও প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু গোশালিক জাতীয় পাখিরা যে বাসা বানাচ্ছে সেগুলি ভঙ্গুর এবং জল প্রতিরোধক নয়। এই অবস্থায় কিছুটা বাধ্য হয়েই বাবলা গাছে বাসা বাঁধতে হয়েছে তাদের।’’ তিনি বলেন, ‘‘অন্য এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে চিল, শকুন জাতীয় শিকারী পাখিরা কিছু ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এই অংশেই অবশিষ্ট গাছগুলিতে কোনওমতে বাসা বেঁধে থাকার চেষ্টা করছে পাখিরা।’’ পাখি পর্যবেক্ষক তথা বিশ্বভারতীর গবেষক ছাত্র সাগর অধূর্য্য জানান, গোশালিক সাধারণত সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই বাবলা গাছেই বাসা বেঁধে থাকতে শুরু করেছে। তবে একই গাছে একাধিক বাসা করার করাণ এলাকায় পর্যাপ্ত গাছের অভাবে বলেই মনে করছেন তিনি। এ ছাড়া জঙ্গল এলাকায় থাকা পাখি যেমন তালচাতক, বসন্তবৌরি, টিয়ার কিছু প্রজাতি গাছ কাটার ফলে সমস্যায় পড়বে বলেও তাঁর অভিমত।
বিশ্বভারতী উদ্যান বিভাগের অধীক্ষক সঞ্জীব মণ্ডলের কথায়, ‘‘বাবলা গাছ কাঁটা ভর্তি এবং পাতাও খুব ছোট। সেখানে বাসা বানালে পাখিদের নিরাপত্তা অনেক কম। এর পরেও টিকে থাকার জন্য গোশালিকদের ওই গাছে বাসা বানাতে হয়েছে। এটি ভাববার বিষয়।’’ শুধু গাছ বলেই নয় মাঠ-ঘাটের উপরেও কিছু পাখির জীবনযাত্রা নির্ভর করে। বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন এলাকায় বহুতলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঠ-ঘাটের পরিমাণ আগের তুলনায় হু-হু করে কমছে। বিপন্ন প্রজাতির মাণিকজোড় পাখির আর দেখা মেলে না। জনজীবনের প্রতি তো বটেই, অবাধে গাছ কাটার ফলে পাখিদের জীবনেও নেমে আসছে বিপর্যয়। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধের দাবি উঠছে সব মহল থেকেই।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জঙ্গলের পাখির স্বভাব, জীবনযাপন এবং মাঠঘাটে ঘুরে বেড়ানো পাখিদের জীবনযাপন আলাদা। গাছ না থাকলে যেমন জঙ্গলের পাখিদের সমস্যা হবে। ঠিক তেমন মাঠ না থাকলে সেখানে থাকা পাখিদের সমস্যায় পড়তে হবে। দুটি'ই সমানভাবে জরুরি। সব পাখির মধ্যে যে কোনও অবস্থায় মানিয়ে
নেওয়ার ক্ষমতা নেই। মানুষের সাহচর্য থেকে দূরে থাকতেও অনেকে পছন্দ করে। বিশেষ করে সেই পাখিদের সমস্যা বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy