টানা ক’দিন বন্ধ থাকার পরে ফের আউটডোরে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
সপ্তাহভর টানাপড়েন চলার পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে কাজে যোগ দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার রাতে ধর্না তোলার পরেই তাঁরা ইন্ডোরে গিয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে আউটডোরেও রোগী দেখলেন। টানা ক’দিনের ভোগান্তি শেষে স্বস্তি পেলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও। হাসপাতালের সুপার গৌতমনারায়ণ সরকার বলেন, ‘‘সোমবার রাতেই জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এ দিন থেকে আউটডোরের পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে।’’
এনআরএস-কাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলনে নামেন। তার জেরে আউটডোর পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ইন্ডোরও পুরোপুরি সিনিয়র ডাক্তারদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ক’দিন ধরে দূর-দূরান্ত থেকে আউটডোরে এসে চিকিৎসা করাতে না পেরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রোগীরা ফিরে যান। ক্ষুব্ধ রোগীরা রাস্তা অবরোধও করেন। কিন্তু নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান জুনিয়র ডাক্তারেরা। ২১ জন সিনিয়র ডাক্তার
গণইস্তফাও দেন। প্রশাসন অবশ্য বরফ গলানোর লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যায়। শেষে সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা রাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন।
সে খবর অবশ্য অনেক রোগী সোমবার রাতে পাননি। দোলাচল নিয়ে এ দিন মেডিক্যালে এসে আউটডোরের দরজা খোলা দেখে তাঁদের মুখে হাসি ফোটে।
যেমন শালতোড়ার জ্যোৎস্না বাউড়ি বলেন, ‘‘সারা গায়ে অসহ্য ব্যথা। কয়েকদিন ধরে আউটডোর বন্ধ দেখে ফিরে যেতে হয়েছে। এ দিনও খোলা পাব কি না, সংশয় নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় লোকজনের মুখে শুনি সব মিটে গিয়েছে। ডাক্তার দেখাতে পারব ভেবে মনে শান্তি পেলাম।’’
সোনামুখীর প্রৌঢ় চঞ্চল দাসের পেটের সমস্যা। তিনি জানান, গত সপ্তাহের গোড়ায় মেডিক্যালে এসে আউটডোর বন্ধ দেখে ফেরত গিয়েছিলেন। তবে খোঁজ রাখছিলেন নিয়মিত। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার রাতেই খবর পাই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি উঠে গিয়েছে। তাই এ দিন খুব সকালেই বাঁকুড়ায় এসে আউটডোরের টিকিট কাটার লাইনে বাড়ির লোককে দাঁড় করিয়ে দিই।’’
আউটডোরের ঘরে ঘরে সেই চেনা ভিড়ের ছবি দেখা গিয়েছে। টেবিলের চারপাশে সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারেরা বসে। তাঁদের ছেঁকে ধরেছে রোগীদের ভিড়। আউটডোরের কর্মীরা জানান, গড়পড়তা যা রোগী আসেন, এ দিন তার থেকে অনেক বেশি ভিড় ছিল। হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘অন্যদিন আউটডোরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার রোগী আসেন। এ দিন তারও বেশি রোগী এসেছিলেন।’’
ইন্ডোরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ক’দিন ধরে ওয়ার্ডগুলিতে এক বা দু’জন সিনিয়র ডাক্তার দেখা যাচ্ছিল। এ দিন তাঁদের সঙ্গে আগের মতো জুনিয়র ডাক্তারদেরও দেখা গিয়েছে।
এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘‘স্যালাইন ফুরিয়ে গিয়েছে বলতেই, দেখছি নার্স ও জুনিয়র ডাক্তারেরা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসছেন। ভরসা ফিরে পেলাম।’’
হাসপাতালের দরজায়-দরজায় নিরাপত্তা রক্ষীদেরও এ দিন বাড়তি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে বলে হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন। গেটে দেখা গিয়েছে, রোগীর পরিজনদের ‘ভিজিটর্স কার্ড’ ভাল করে পরীক্ষা করে ইন্ডোরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
অস্থি বিভাগের এক জুনিয়র ডাক্তার রোগী দেখার ফাঁকে বলেন, ‘‘আন্দোলন শুধু আমাদের নিরাপত্তা নিয়েই নয়, রোগীদের স্বার্থেও করা হয়েছে। রোগীরা কষ্ট পেলে আমাদেরও ভাল লাগে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy