বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রশ্ন করতে ‘ভুলে’ গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়! পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে বেজায় ফাঁপড়ে পড়েছিলেন দ্বিতীয় সেমেস্টারের দুই পরীক্ষার্থী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভালয় ভালয় পরীক্ষাটা দিতে পেরেছেন তাঁরা। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পেরেই আমরা দ্রুত প্রশ্নপত্র তৈরি করে ওই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম।’’ তবে গোটা ঘটনায় নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভূতুড়ে সিরিজের গল্পে নানা আজব কান্ডকারখানা হয়। আর গল্পের চরিত্রগুলির তখনকার বুঝুম্ভুল অবস্থাটাকে লেখক বলেন— ‘একগাল মাছি’। মঙ্গলবার পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রায় সে রকমই দশা হয়েছিল বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমেস্টারের দুই পড়ুয়ার। জানতে পারেন, তাঁদের প্রশ্নই পরীক্ষাকেন্দ্রে আসেনি। প্রথম অর্ধে যখন সহপাঠীরা হুড়মুড় করে উত্তর লিখে চলছেন, তখন অপেক্ষা করেছেন তাঁরা। সেই অবসরে বিশ্ববিদ্যালয় যারপরনাই তৎপরতায় দু’জনের জন্য প্রশ্নপত্র বানিয়েছে। সেটা হাতে পেয়ে দু’জন পরীক্ষা দিয়েছেন দ্বিতীয় অর্ধে, চতুর্থ সেমেস্টারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।
এখন সেমেস্টারের কাঠামোয় পড়াশোনা হচ্ছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ মেনে তৈরি হয়েছে পাঠ্যক্রম। যে সমস্ত পড়ুয়ারা অনার্স পড়েন, তাঁদের দু’টি ঐচ্ছিক বিষয়ও পড়তে হয়। একটি ‘কম্পালসারি ইলেক্টিভ’। বাছাবাছির সুযোগ নেই। অন্যটি ‘জেনেরিক ইলেক্টিভ’। সমস্ত বিষয়ের এক বা একাধিক কোর্স থাকে। তার মধ্যে থেকে পড়ুয়া নিজের পছন্দ মতো বেছে নেন।
মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় সেমেস্টারের জেনেরিক ইলেক্টিভ বিষয়গুলির পরীক্ষা। অর্থনীতির দ্বিতীয় সেমেস্টারে আছে দু’টি কোর্স। একটি ‘ইন্ট্রোডাক্টরি ম্যাক্রোইকনমিক্স’। অন্যটি ‘মানি অ্যান্ড ব্যাঙ্কিং’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের জনা চোদ্দো পড়ুয়া অর্থনীতির জেনেরিক ইলেক্টিভ কোর্স পড়ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন বেছেছিলেন ‘মানি অ্যান্ড ব্যাঙ্কিং’ কোর্সটি। এক জনের পরীক্ষার আসন পড়েছিল সোনামুখী কলেজে। অন্য জনের বড়জোড়া কলেজে। পরীক্ষা ছিল প্রথম অর্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পরীক্ষাকেন্দ্রে দেখা যায় পরীক্ষার্থী হাজির থাকলেও প্রশ্ন আসেনি। তড়িঘড়ি কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খবর যায় বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তাঁর নির্দেশেই দ্রুত প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়ার বন্দোবস্ত হয়। জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ প্রশ্ন করছেন, এমন ‘ভুল’ হওয়া কি ঠিক? রেজিস্ট্রেশনের সময়ে নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা সত্বেও কী করে দু’জনের পছন্দ করা কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নজর এড়িয়ে গেল, উঠছে সেই প্রশ্ন।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক অসিত দাঁ বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কী ভাবে এই ভুল হল তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণবাবু বলেন, “এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে।’’
এর আগেও সেমেস্টারের পরীক্ষার ব্যাপারে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। গত শিক্ষাবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কলেজের পড়ুয়াদের একাংশের দ্বিতীয় সেমেস্টারে বসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কলেজের বাধ্যতামূলক অন্তবর্তী পরীক্ষার ফল বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা না পড়ায় গোলমাল বেধেছিল সে বার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy