Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Subrata Mukherjee

Subrata Mukherjee Death: সুব্রত আর আসবেন না, আক্ষেপ বাঁকুড়ায়

তাঁর সঙ্গে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার নাড়ির বাঁধন ছেঁড়েনি। বর্ণময় রাজনৈতিক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে তাই শোকের আবহ দুই জেলায়।

২০১৯-এ বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ মাঠে সস্ত্রীক সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

২০১৯-এ বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ মাঠে সস্ত্রীক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩২
Share: Save:

চেয়েছিলেন রাঢ়বঙ্গের প্রতিনিধি হয়ে লোকসভায় যেতে। ইচ্ছাপূরণ হয়নি। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র দু’বার তাঁকে শূন্য হাতে ফিরিয়েছিল। তবে তাতে তাঁর সঙ্গে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার নাড়ির বাঁধন ছেঁড়েনি। বর্ণময় রাজনৈতিক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে তাই শোকের আবহ দুই জেলায়।

গত ৪ অক্টোবর বন্যা-পরিস্থিতি দেখতে বাঁকুড়ায় এসেছিলেন সুব্রতবাবু। প্রশাসনিক বৈঠকও করেছিলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। তার ঠিক এক মাসের মাথায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সুব্রতবাবুর মৃত্যুতে শুধু তৃণমূল নয়, শোকাহত বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতারাও।

২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের তরফে কংগ্রেসের টিকিটে বাঁকুড়া কেন্দ্রে লড়াই করেছিলেন সুব্রতবাবু। সে বার তাঁকে হারতে হয় সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়ার কাছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকেই বাঁকুড়া কেন্দ্রে লড়তে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বারও তিনি জিততে পারেননি। হারতে হয়েছিল বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের কাছে।

সুব্রতবাবুর মৃত্যুতে সুভাষবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি একটি পুজো মণ্ডপে ছিলাম। আমার এক সহকারী দুঃসংবাদটা দিলেন। মন ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।” তার পরে বললেন, “২০১৯-র ভোটে তৃণমূল ওঁকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরেই ফোন করেছিলাম। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। কথা বলতে বলতে ওঁকে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনেই হচ্ছিল না। অসুস্থ হওয়ার পরে, নিয়মিত ওঁর খবর নিতাম। আশা করেছিলাম, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তা হল না।”

সুব্রতবাবুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বাসুদেববাবু। প্রবীণ ওই সিপিএম নেতা বলেন, “ওঁর যে দিকটা বেশি করে বলার, তা হল, উনি প্রচারে কোথাও কখনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। লড়াইটা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। সে বার (২০০৯) প্রচার চলাকালীন অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম বাঁকুড়ার হাসপাতালে। সুব্রতবাবু এক দিন প্রচারে বেরনোর আগে দেখা করতে এসেছিলেন হাসপাতালে। এই বিষয়গুলি এখন রাজনীতির মধ্যে দেখা যায় না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে ওঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত অমায়িক। এখন সে সংস্কৃতি কোথায়! এখন যে ধরনের রাজনীতি দেশ ও রাজ্যে চলছে, তা ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেখিনি। বলতেই হয়, এই রাজনৈতিক আবহের মধ্যে থেকেও সুব্রতবাবু ছিলেন ব্যতিক্রমী। আদ্যপান্ত এক জন ভদ্র ও সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে ওঁকে সকলে মনে রাখবেন।”

২০০৯ লোকসভা ভোটে সুব্রতবাবুর হয়ে প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রচারের মাঝেই হঠাৎ এক দিন সুব্রতদা আমাকে বলেছিলেন, ‘চল, তোর সঙ্গে ছবি তুলব’। আমাকে পাশে নিয়ে ছবি তুলেছিলেন। বাঁকুড়ার মানুষ ওঁকে চিনতে পারলেন না। এই আক্ষেপ নিয়েই দাদা চলে গেলেন।”

গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এত বড় মাপের নেতা হয়েও দাদার কোনও অহঙ্কার ছিল না। বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। গরমে ওঁকে প্রচারে নিয়ে যাওয়ার সময় চিন্তায় থাকতাম। দাদা বলতেন ‘তোরা যত দূর নিয়ে যাবি, আমি চলে যাব’। সে মানুষটা নেই, বিশ্বাস হচ্ছে না।”

জেলা তৃণমূল নেতা তথা তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “কোথাও ধুতি পরার কথা উঠলেই সুব্রতদার নাম উঠে আসে। বাঁকুড়ার মানুষের বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে, রাস্তাঘাট ও পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজে গতি আনতে সুব্রতদা সব সময় তৎপর থাকতেন।” তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহমহাপাত্রের কথায়, “যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলাম ২০০৯ সালে। তখন দেখেছি সন্ত্রাস উপেক্ষা করে দাদা আমাদের নিয়ে যেখানে-সেখানে ঢুকে পড়তেন।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “মনে হচ্ছে, দাদাকে হারালাম।”

বাঁকুড়ায় এলে শহরের চাঁদমারিডাঙার একটি হোটেলে উঠতেন সুব্রতবাবু। ওই হোটেলের অন্যতম কর্ণধার প্রসেনজিৎ দত্তর কথায়, “কখনও ভিআইপি হয়ে হোটেলে আসতেন না সুব্রতদা। ওঁর ব্যবহার মন কেড়েছিল হোটেলের প্রত্যেক কর্মীর। মানুষটা আর আসবেন না, ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”

তথ্য সহায়তা: শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Mukherjee CPM TMC Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy