মাচানতলা ভগ্নপ্রায় পুরনো তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ভবনের নীচে চলছে বাজার। নিজস্ব চিত্র ।
খসে পড়ছে ছাদের চাঙড়। দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে বাড়ির কঙ্কাল। এমনই জীর্ণ ভবনের নীচে চলছে জমজমাট বাজার! বাঁকুড়া শহরে নজর ঘোরালে এমন জীর্ণ বাড়ি খুঁজে পাওয়া মোটেই কঠিন নয়। যা দেখে অনেকেই যে কোনও সময় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। বিশেষত পুরুলিয়া শহরের রাসতলার দুর্ঘটনার পরে অনেকেই বাঁকুড়ার বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। ওই পুরনো ভবনগুলি নিয়ে পুরসভার ‘নীরবতায়’ প্রশ্ন উঠেছে।
বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত মাচানতলায় বেশ কয়েকটি জীর্ণ ভবন দেখা যায়। মাচানতলায় ট্র্যাফিক পুলিশের অফিস সংলগ্ন এলাকাতেই একটি দোতলা পুরনো বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির নীচেই বেশ কয়েকটি দোকান চলছে। পুরভবনের ঠিক পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন জরাজীর্ণ ভবন। পলেস্তারা খসে ইঁট বেরিয়ে গিয়েছে ওই ভবনেরও। মাচানতলায় পুলিশ সুপারের পুরনো অফিস মোড়ে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পুরনো ভবনের অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন অনেকে। প্রায় এক পাশে হেলে পড়া ওই ভবনের নীচেও জমাটি বাজার। হকাররাও ওই ভবনের নীচে জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে বসেন। দিনভর ভিড়ে গমগম করে ওই তল্লাট। সেখানকার এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, “কখন যে এই ভবন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে তার ঠিক নেই। বিশেষ করে টানা ক’দিন বৃষ্টি হলেই ভয় করে। এলাকা জমজমাট বলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে আমরা ব্যবসা করি।’’ তবে ওই ভবনটি ভেঙে নতুন করে ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রাশাসন।
শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকাতেও বেশ কয়েকটি ভগ্নপ্রায় বাড়ি দেখা যায়। সেসবের কয়েকটিতে লোকজনও থাকে। ওই ওয়ার্ডের শাঁখারিপাড়ার একটি বাড়িতে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাস করেন এক ব্যক্তি। জরাজীর্ণ বাড়িতে কেন বাস করছেন? ওই ব্যক্তির জবাব, “বয়স্ক মাকে নিয়ে কোথায় যাব? মাথা গোঁজার অন্য কোনও জায়গা নেই। দৈনিক বেতনে আমি ফুলের দোকানে কাজ করি। বাড়ি সংস্কারের সামর্থ নেই।”
পাশের পোদ্দারপাড়া, বড়ষোলোআনা, রানিগঞ্জ মোড়, রাসতলা মোড়, শান্তিবাবুর গলির মতো শহরের পুরনো এলাকাগুলোতে বহু পুরনো বাড়ি রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে কোনও সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে বাড়িগুলো। কিন্তু পুরসভার নজর নেই।
২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুর-প্রতিনিধি রাজীব দে বলেন, “আমার ওয়ার্ডের অন্তত পাঁচটি বসবাসের অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি রয়েছে। ওই সব বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারগুলির অনেকেরই সংস্কারের ক্ষমতা নেই। পুরসভাকে জানিয়েছি। কী ভাবে ওঁদের সাহায্য করা যায় তা ভাবছি।”
শহরে জরাজীর্ণ বাড়ির সংখ্যা ক’টি তার সঠিক তথ্য নেই পুরসভার কাছেও। পুরপ্রধান তৃণমূলের অলকা সেন মজুমদারও বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, “কয়েকটি পুরনো বাড়ি রয়েছে। আমাদের নজরে আছে সেগুলি।” কিন্তু সেগুলি নিয়ে পুরসভার কী পরিকল্পনা তা জানাতে পারেননি।
উপপুরপ্রধান হিরালাল চট্টরাজ বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি নিয়ে কোনও অভিযোগ জানালে আমরা বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংস্কারের নির্দেশ দেব। মাচানতলা এলাকাতে দু’টি পুরনো ভবন আমাদের নজরে রয়েছে। এর বাইরে আর কোথাও জরাজীর্ণ বাড়ির কথা শুনিনি।” বাড়ি সংস্কারে যাঁদের সামর্থ নেই তাঁরা বিষয়টি জানালে প্রশাসনের নজরে আনার আশ্বাস দিয়েছেন হিরালাল।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy